• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শেখ কামালকে হয়তো আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম : মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম


খাদিজা নিপা
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৩, ০৯:৫২ এএম
শেখ কামালকে হয়তো আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম : মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রথম সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ছিল। ডাকসুর ভিপি হিসেবে এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সেলিম। সেই কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছিলেন তিনি। সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে আলাপকালে সেই রাত ও বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী কয়েকদিনের অভিজ্ঞতার কথা জানান এই বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা।

সংবাদ প্রকাশ : ১৫ আগস্ট যখন শুনলেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, তখন আপনাদের মানসিক অবস্থা কেমন হয়েছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। তাঁর আসাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি হিসেবে আমি সে আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ১৪ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আমি এবং বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ শেখ কামাল এসে বললো, সেলিম ভাই আপনারা তো আছেন; আমি যাই, কাল সকাল সকাল চলে আসবো। ওর কথা শুনে আমার মনটা বেশ দুর্বল হয়ে গেলো। আবার ভাবলাম শেখ কামাল কয়েকদিন আগে বিয়ে করেছে, তাই তাকে শর্ত দিলাম প্রেসিডেন্টের আগে এসে ডিউটিতে যুক্ত হতে। এখন আমি ভাবি, তখন যদি দুর্বল না হয়ে তাকে যেতে না দিতাম তাহলে হয়তো শেখ কামালকে আমরা বাঁচাতে পারতাম। ভোরের দিকে আমি কলা ভবনের গেইটে বসে আছি, তখন গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। তাতে একটু আতংকিত হয়ে পড়ি এবং সঙ্গে সঙ্গে ২/৩ জনকে পাঠাই যেদিক থেকে আওয়াজ এসেছিল। কিছুক্ষণ পর তারা এসে জানালো সেদিকে যাওয়া যাচ্ছে না। কিছু একটা হয়েছে। তারপরই আমরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবরটি রেডিওতে শুনতে পাই। তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেই এর প্রতিবাদ করতে হবে এবং আশেপাশে ফোন করে সবাইকে বলি এর প্রতিবাদ করতে হবে। তোমরা অপেক্ষা করতে থাকো, আমরা জানাবো।

সংবাদ প্রকাশ : সেদিন কীভাবে প্রতিবাদ জানালেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : দেখতে পেলাম তিন বাহিনীর প্রধান একে একে এরই মধ্যে খন্দকার মুশতাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে। তারপর দেখলাম আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভায় যারা ছিলেন, কয়েকজন বাদে তারাও একে একে নতুন মন্ত্রীসভায় যোগ দিলেন। আমরা তখন বুঝতে পারলাম পরিস্থিতির ভেতর এমন একটা উপাদান আছে যে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করলে কাউকে পাওয়া যাবে না। কারফিউ জারি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জে সেদিনই একটা প্রতিবাদ মিছিল হয় যেটা ছাত্র ইউনিয়ন সংগঠিত করে। আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিলাম আরও প্রস্তুতি নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং যেদিন বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে সেদিন ক্যাম্পাসে মিছিল বের করবো।

এরই মধ্যে নানা বাধা আসে। অনেকেই বলে তোমরা এই মিছিল করবে না। কিন্তু আমরা সকল বাধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে প্রতিবাদ মিছিল করবো, সেভাবে প্রস্তুতি চালাতে থাকলাম। ৪ নভেম্বরের আগের দিন একটা অভ্যুত্থানের খবর পাচ্ছিলাম এবং নানা রকম গুজবের খবর পাচ্ছিলাম। আমরা তখন ঠিক করলাম পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম আমরা করবোই। ৪ নভেম্বর বটতলায় বিশাল জমায়েত হয়। সেখানে আমি একটা সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা শেষে নীরব মিছিল করে বত্রিশের দিকে যাই। আমরা যখন নীলক্ষেত মোড়ে তখন আমাদের পুলিশ আটকে দেয়। 

সংবাদ  প্রকাশ : ১৫ আগস্টের পরের দুই দিনের ঢাকার পরিস্থিতি কেমন দেখেছিলেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : ১৫ আগস্টের পর তো ঢাকায় কারফিউ হয়ে গেছে। একরকম সন্ত্রাসী পরিস্থিতি। জনগণের ভিতরে একটা থমথমে ভাব। মুখ ফুটে কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারছে না। শাসক হিসেবে যে আওয়ামী লীগ বা তার দল দায়িত্ব পালন করবে সেটা তারা করছে না। বরং তারা নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। আবার তাদের এমন একটা ভাব যে তারা ভুল করে ফেলেছে। কিংবা বঙ্গবন্ধু ভুল করে ফেলেছে। কেউ কেউ তো আমাকে বলেই ফেললো, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় নাই, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সব মিলিয়ে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল।

 

কথাপ্রকাশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!