সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই চাঁদের মাটিতে নতুন ইতিহাস লিখবে ভারত। তা-ও আবার অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম খরচে চন্দ্রাভিযান। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় থাকা ভারতের কোটি কোটি মানুষ চন্দ্রযান-৩-এর নিরাপদ অবতরণের জন্য প্রার্থনাও করছেন।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দেশটির স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার পরপরই চাঁদের বুকে অবতরণ করতে যাচ্ছে চন্দ্রযান-৩। চন্দ্রযানের ল্যান্ডার ‘বিক্রম’- চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করার কথা।
চন্দ্রযান-৩ সফল হলে ভারতই হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছতে পারা প্রথম দেশ। ‘চন্দ্রযান’ একটি সংস্কৃত শব্দ, যার ইংরেজি প্রতিরূপ ‘মুনক্রাফট’। এর আগে ২০১৯ সালে দক্ষিণ মেরুতে ভারতের প্রথম চন্দ্রযান অবতরণ চেষ্টা সফল হয়নি।
সম্প্রতি রাশিয়াও দক্ষিণ মেরুতে অভিযান চালায়। ১১ আগস্ট ল্যান্ডার নিয়ে তাদের লুনা-২৫ রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়। তবে চাঁদে স্পর্শ করার আগে সেটি ভেঙে পড়ে। এটি ছিল প্রায় ৫০ বছর পর রাশিয়ার প্রথম চন্দ্রাভিযান।
ভারতের আগেই, ২১ আগস্ট রুশ মহাকাশযান দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। তবে রোববার (২০ আগস্ট) মহাকাশযানটি বিধ্বস্ত হয়।
রাশিয়ার অভিযান ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে চন্দ্রযান অবতরণ করানো প্রথম দেশ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ভারতের।
চলতি সপ্তাহে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরো চাঁদের আরও কিছু ছবি শেয়ার করেছে। শনিবার চন্দ্রপৃষ্ঠের মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে ছবিগুলো তুলেছে দেশটির চন্দ্রযান-৩। ভারতের মহাকাশ সংস্থার সাবেক প্রধান কে শিভান বলেন, ল্যান্ডার পজিশন ডিটেকশন ক্যামেরার (এলপিবিসি) তোলা ছবিগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এই অভিযান সফল হবে।
সোমবার এএফপিকে তিনি বলেন, “এটা আমাদের সাহস দিচ্ছে যে আমরা কোনো সমস্যা ছাড়াই এই অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারব।”
শিভান আরও জানান যে চার বছর আগে প্রথম অভিযানের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েছে ইসরো। সেবার বিজ্ঞানীরা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের অল্প কিছুক্ষণ আগে একটি লুনার মডিউলের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছিলেন।
শিভান আরও বলেন, “চন্দ্রযান-৩ আরও শক্তিশালীভাবে এগিয়ে চলেছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী এবং আমরা আশা করছি যে সবকিছু ভালোভাবেই শেষ হবে।”
প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে হাজার হাজার দর্শকের সামনে এ মিশন শুরু হয়। ভারতের চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয় গত ১৪ জুলাই। যদিও ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকের অ্যাপোলো মিশনের চেয়ে চাঁদে পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগছে চন্দ্রযান-৩-এর।
তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম শক্তিশালী রকেট ব্যবহার করছে ভারত। তার পরিবর্তে মহাকাশযানটি চন্দ্রের গতিপথে মাসব্যাপী যাত্রা করার আগে গতি অর্জনের জন্য পৃথিবীকে বেশ কয়েকবার প্রদক্ষিণ করেছিল।
মহাকাশযানটির ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’; সংস্কৃত ভাষায় যার অর্থ ‘বীরত্ব’। গত সপ্তাহে ল্যান্ডারটি প্রপালশন মডিউল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং গত ৫ আগস্ট চন্দ্রের কক্ষপথে প্রবেশ করার পর থেকে চাঁদের পৃষ্ঠের ছবি পাঠাচ্ছে।
অবতরণের একদিন আগেও ইসরো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানিয়েছে, “এখন পর্যন্ত ভালোভাবেই এগোচ্ছে চন্দ্রযান।” এই অভিযান সফল হলে মহাকাশ গবেষণার এক অভিজাত শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হবে ভারত। যুক্তরাষ্ট, রাশিয়া ও চীনের পর চাঁদে অবতরণ করা চতুর্থ দেশ হবে ভারত।
অথচ মহাকাশ গবেষণায় ভারতে বরাদ্দকৃত অর্থ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র বলা যায়। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ বাজেটে মহাকাশ বিভাগে ভারতের বরাদ্দ ছিল ১.৫ বিলিয়ন ডলার। এতে ইসরোসহ বাকি সবকিছুর ব্যয় অন্তর্ভুক্ত।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার।
সর্বশেষ অভিযানের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম।