• ঢাকা
  • রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১, ৯ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

তুরস্কের ড্রোন যেভাবে খুঁজে পেল রাইসির হেলিকপ্টার


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
তুরস্কের ড্রোন যেভাবে খুঁজে পেল রাইসির হেলিকপ্টার
ছবি : সংগৃহীত

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার রোববার (১৯ মে) ‘হার্ড ল্যান্ডিং’ অর্থাৎ বিপজ্জনকভাবে অবতরণ করেছে এমন খবর পাওয়ার পর, বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাকবলিত হেলিকপ্টারটির খোঁজে কয়েক ঘণ্টা ধরে বন ও পাহাড়ি এলাকায় চিরুনি অভিযান চালায়।

তবে ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টির কারণে দুর্ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের দৃষ্টিসীমা মাত্র পাঁচ মিটারে নেমে এসেছিল। এমন অবস্থায় উদ্ধারকারী দলগুলোকে ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হয়। ইরানি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, রাইসি আজারবাইজান ও ইরানের সীমান্তে একটি বাঁধ উদ্বোধন করে তাবরিজ শহরের দিকে ফিরছিলেন।

এ সময় পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা অঞ্চলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সে সময় ওই হেলিকপ্টারে রাইসির সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরও ছয়জন আরোহী ছিলেন। হেলিকপ্টারটি উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর, ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টির মধ্যে জোলফায় বিধ্বস্ত হয়। হার্ড ল্যান্ডিংয়ের খবর পেয়ে ইরানের প্রতিবেশী দেশ তুরস্ক, ইরাক ও আজারবাইজান এগিয়ে আসে এবং সম্মিলিতভাবে ব্যাপক অনুসন্ধান অভিযান শুরু করে।

ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ-এর মতে, রেড ক্রিসেন্টের অপারেশন প্রধান রাজিয়া আলিশোন্দি বলেছেন যে খারাপ আবহাওয়ার কারণে তল্লাশি দলের এগিয়ে যেতে অনেক অসুবিধা হয়েছিল। তিনি বলেন, অনুসন্ধান অভিযানে ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা ছিল রীতিমতো অসম্ভব।

খোঁজ মিলেছে রাইসির হেলিকপ্টারের

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা করে যে তারা ইরানের অনুরোধে রাইসির হেলিকপ্টার শনাক্ত করার জন্য কোপার্নিকাস নামে তাদের ম্যাপিং সার্ভিস চালু করেছে। কোপার্নিকাস সিস্টেম ‘স্যাটেলাইট ইমেজের’ মাধ্যমে ম্যাপিং করে থাকে।

গভীর রাতে, রেড ক্রিসেন্ট সদর দপ্তর থেকে ঘোষণা করা হয় যে তুরস্কের ড্রোন ‘হটস্পট’ শনাক্ত করেছে। রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডারও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তুরস্কের পাঠানো ড্রোনটি রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের স্থান খুঁজে বেড়াচ্ছিল। এলাকাটি স্ক্যান করার পর, ড্রোনটি একটি ‘থার্মাল সোর্স’ শনাক্ত করে এবং ওই অবস্থানের তথ্য ইরানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শেয়ার করা হয়।
এটি ছিল তুরস্কের বায়রাকতার আকিনজি মডেলের একটি ড্রোন যা কয়েক ঘণ্টা অনুসন্ধানের পর সোমবার সকালে উত্তর-পশ্চিম ইরানে রাইসির হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করে। এটি একটি সশস্ত্র ড্রোন যা ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ইরানি কর্তৃপক্ষ তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোয় তারা একটি আকিনজি ইউএভি এবং একটি নাইট ভিশন কুগার ড্রোন পাঠায়।

তুরস্কের পরিবহনমন্ত্রী আব্দুল কাদির ইউরাউলু বলেছেন, “ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করছিলেন, সেখানে সিগন্যাল সিস্টেম চালু ছিল না বা সেরকম কোনো ব্যবস্থাই ছিল না।”

ড্রোনটির বৈশিষ্ট্য কী এবং কীভাবে খুঁজে পেল হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ
বায়রাকতার আকানসি কীভাবে রাইসির হেলিকপ্টারটির অবস্থান শনাক্ত করেছিল তা জানতে, এই উন্নত ড্রোনটির বৈশিষ্ট্যগুলি জানা গুরুত্বপূর্ণ:

বায়রাকতার আকানসি হলো সর্বশেষ সশস্ত্র ড্রোন যা তুর্কি প্রতিরক্ষা সংস্থা-বায়কার ডিফেন্স তৈরি করেছে। বায়রাকতার ড্রোনের নির্মাতা বায়কারের নেতৃত্বে রয়েছেন দুই ভাই - প্রধান নির্বাহী হালুক বারাকতার এবং তার ভাই প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সেলজুক বারাকতার। যিনি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মেয়েকে বিয়ে করেছেন।
প্রতিরক্ষা সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুসারে, বায়রাকতার আকিনজি একটি কৌশলগতভাবে উচ্চমানের প্রযুক্তি। এর অনন্য কাঠামো এবং পাখার ডিজাইনের কারণে এটি বিভিন্ন পেলোড বহন করতে সক্ষম।
বায়রাকতার আকিনজিতে রয়েছে দুটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এভিওনিক্স যা সিগন্যাল প্রসেসিং, সেন্সর ফিউশন এবং রিয়েল-টাইম পরিস্থিতিগত সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে।
এই ড্রোনটি বায়রাকতার টিবিটু ড্রোন ট্যাকটিকাল ইউএভির আরেকটি সংস্করণ। তবে এটি তার শ্রেণির সবচেয়ে শক্তিশালী ইউএভিগুলোর মধ্যে একটি। এটি ছয় হাজার কেজি পর্যন্ত ওজন তোলার ক্ষমতা আছে এবং এটি ২৪ ঘণ্টা এবং ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় একযোগে উড়তে পারে।
ড্রোনটিতে দুটি টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন এবং ২০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ডানা রয়েছে। যার কারণে এটি বিস্তৃত পরিসরে অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয় শক্তি পায়।
এয়ার-টু-গ্রাউন্ড এবং এয়ার-টু-এয়ার অর্থাৎ আকাশ থেকে মাটিতে এবং আকাশ থেকে আকাশে হামলার জন্যও এই ড্রোন ব্যবহার করা যায়।
এই উচ্চ প্রযুক্তির মনুষ্যবিহীন ড্রোনটি মূলত ফাইটার জেটকে সহায়তা করার জন্য এবং বিভিন্ন অভিযান পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Link copied!