• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

এশিয়ায় ন্যাটো সম্প্রসারণ নিয়ে কড়া হুশিয়ারি চীনের


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৩, ১১:৫১ এএম
এশিয়ায় ন্যাটো সম্প্রসারণ নিয়ে কড়া হুশিয়ারি চীনের

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনের পর একটি ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে চীনকে সামরিক জোটের স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ন্যাটো। এই ঘোষণায় ৯০টি ভিন্ন ভিন্ন পয়েন্ট রয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, চীন ও রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারত্ব গভীর করতে লিপ্ত। উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে আইনের শাসনভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থাকে দুর্বল করতে চাইছে। ন্যাটোর এই ঘোষণায়ই এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, মূলত এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। জানিয়েছে, পশ্চিমারা এ অঞ্চলে কোনো সামরিক অবস্থান তৈরির চেষ্টা করলে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া ন্যাটোর সম্মেলনের ঘোষণায় প্রথমবারের মতো চীনের নীতি আর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ফলে সৃষ্ট ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবস্থিত চীনা মিশন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা ও প্রত্যাখ্যান করছি। যে কাজ চীনের বৈধ অধিকার ও স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলবে তার দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। এশীয় প্রশান্ত অঞ্চলে ন্যাটোর গতিবিধির বিরোধিতা করে বেইজিং। চীনের বৈধ অধিকার ও স্বার্থকে জটিলতায় ফেলে এমন যেকোনো পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।”

এছাড়া জোটের নেতারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো প্রদানের ক্ষমতাধারী স্থায়ী সদস্য হিসেবে  গঠনমূলক ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দা জানানোর আহ্বান করেন।

জবাবে চীনা কূটনীতিকরা বলেন, ন্যাটো তার বিবৃতিতে প্রকৃত সত্য উপেক্ষা করে গেছে। চীনের সুনামহানি করতে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা অভিযোগ তুলার কথা জানায় তারা। তারা নিজেদের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় যা যা করা প্রয়োজন তাই করবে।

চীনের ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস এ বিষয়ে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে যেখানে ন্যাটোকে ‘ওয়াশিংটনের কুঠার, বর্শা এবং বেলচা’ এবং ‘যুদ্ধের উৎস’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ন্যাটোকে অবশ্যই অবিলম্বে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দিকে প্রসারিত কালো হাত প্রত্যাহার করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের চিন্তাও করা উচিত নয়। এশিয়ার বেশিরভাগ দেশই এ অঞ্চলে ন্যাটোকে স্বাগত জানাবে না। শুধু তাই নয় এশিয়ার দেশগুলো ন্যাটোকে একটি ভয়ানক দানব হিসেবে দেখে। একে যেকোনো মূল্যে এড়ানো উচিত।”

ন্যাটো সম্মেলনে যোগদানকারী নেতাদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল চীন এবং উত্তর কোরিয়ার ইস্যু নিয়ে এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে নিজেরে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যারা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে সমর্থন দেখিয়েছে এরকম চারটি দেশকে গত বছরের মাদ্রিদে ন্যাটো সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এবারের সম্মেলনে ন্যাটো জোটের সদস্য না হয়েও জাপান এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিশিদা গত মে মাসে বলেছিলেন, জাপানের ন্যাটো সদস্য হওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। যদিও ন্যাটো জানিয়েছিল, তারা এশিয়ান অঞ্চলে প্রথম টোকিওতে লিয়াজো অফিস খোলার পরিকল্পনা করছে।

দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিতে জি-৭

ইউক্রেনের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা চুক্তি সই করেছে জি-৭ এর সদস্যরা। লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে ন্যাটো সম্মেলনের শেষদিন বুধবার এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছে জি-৭।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা প্রত্যেকে ইউক্রেনের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট, দ্বিপাক্ষিক, দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি এবং ইউক্রেনকে রক্ষা করতে সক্ষম একটি টেকসই শক্তি নিশ্চিত করার জন্য এবং ভবিষ্যতে রুশ আগ্রাসনকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করব।”

ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করবে রাশিয়া

ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করবে রাশিয়াও। বুধবার এমন ইঙ্গিত দিয়েছে মস্কো। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এদিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাশিয়াকেও সম্ভাব্যভাবে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করে ইউক্রেনকে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। ‘স্বাভাবিকভাবেই, এ ধরনের অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহার একটি গেম-চেঞ্জার এবং এটি অবশ্যই রাশিয়াকে প্রতিক্রিয়া হিসেবে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করবে,’

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যদি কখনো ইউক্রেনে মার্কিন ক্লাস্টার বোমা সরবরাহ করা হয়, তাহলে রাশিয়াকে ইউক্রেনের সেনাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। তার মতে, রাশিয়া এখনো পর্যন্ত তার বিশেষ সামরিক অভিযানে ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত রয়েছে কারণ তারা বুঝতে পেরেছে যে, সেগুলো বেসামরিকদের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে।

Link copied!