পাকিস্তানে বসবাসরত ১৭ লাখ ৩০ হাজার আফগান শরণার্থীতে নভেম্বরের মধ্যে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল দেশটির সরকার। বুধবার (৪ অক্টোবর) ইসলামাবাদ থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওই সময়সীমার মধ্যে যদি অবৈধভাবে পাকিস্তানে বসবাসকারীরা স্বেচ্ছায় চলে না যান, তা হলে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে।
এদিকে এই ঘটনার জেরে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের সংঘাত নতুন মোড় নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি বলেন, পাকিস্তানের মাটিতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের কোনো জায়গা হবে না।
দ্য ডন জানায়, আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার অনুপ্রবেশ এবং মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই শুরুর পর থেকে পাকিস্তানে মূলত পাশতুন জনগোষ্ঠীর শরণার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছিল। দুদশক আগে আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনা অভিযান শুরুর পরও কয়েক লাখ আফগান নাগরিক প্রাণভয়ে পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন। মূলত পাক-আফগান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান প্রদেশে তাদের বসবাস।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, মূলত দুটি কারণে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। প্রথমত, দেশের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাড়তি ব্যয়বহনে অক্ষমতা। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংকট।
পশতুন বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে আফগান নাগরিকদের একাংশের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে পাকিস্তানের সেনার অভিযোগ। ইসলামাবাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে পাকিস্তান সরকার এবং সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা। টিপিপিকে আফগান তালিবানদের একাংশ সরাসরি মদত দিচ্ছে বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় আফগান শরণার্থীদের জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে।
প্রসঙ্গত, পাক খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান প্রদেশের পশতুন গরিষ্ঠ এলাকার একাংশকে দীর্ঘ দিন ধরেই নিজেদের বলে দাবি করে আফগানিস্তান। তালিবান জমানাতেও সেই দাবি প্রত্যাহার করা হয়নি। গত বছরের অগাস্টে কাবুলে তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে পাকিস্তান ২,৭০০ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতার বসাতে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু তালিবান শাসকদের প্রবল বাধায় সেই কাজ শুরু করা যায়নি।