দিন যাপনের প্রতিটা মুহূর্তে যদি মস্তিষ্কে একই কারণে যাতনা দিতে থাকে, আচমকা হাসির উদ্রেক ঘটায় আবার মনের কোণে অকারণ মেঘ জমায়, কখনও বা কোনো প্রিয় নামের তসবিহ জপতে থাকে, অনুভূতিগুলো ভয়ানক পীড়া দিতে থাকে অনবরত। আর কণ্ঠের কাছে ঝলকে ওঠা অকস্মাৎ তীব্র ব্যথা যদি প্রেম প্রকাশক হয়, তবে আমিও প্রেমে পড়েছিলাম, হয়তো ভালোও বেসেছিলাম।
তুমি আর আপনির মধ্যে গুলিয়ে ফেলাকে যদি উৎকণ্ঠার ব্যাপক বহিঃপ্রকাশ বলে, তবে আমিও হয়তো কিছুটা কাছে আসার সাহস করেছিলাম।
সন্ধ্যায় ঘরে নাটকীয় অভ্যাসে ধূপধোঁয়া দিয়ে মনে মনে মঙ্গল কামনায় চোখ বন্ধ করে রেখেছি, হয়তো তাতে প্রকটভাবে তুমিই ছিলে।
মেঘের আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়লে অদ্ভুত এক অস্থিরতা অনুভব করেছি, তখনও হয়তো তোমাকে পাওয়ার ব্যাকুলতা ছিল।
ব্যস্ত শহরের সবগুলো ঘরের আলো নিভে যাওয়া অবধি বারান্দার ছোট্ট চৌকিটাতে বসে চোখ দুটোকে জাগিয়ে রেখেছি, প্রিয় গানের অন্তরাগুলো আওড়াতে থেকেছি নিঃসঙ্গভাবে, হয়তো তখনও চেয়েছি গানের অন্তরার মাঝে তুমি এসে উঁকি দিয়ে যাও।
মধ্যরাতে বোকাবাক্সে আটকে থাকা মূকাভিনয়গুলো যদি একান্তই খুব প্রিয় হয়ে ওঠে হঠাৎ, তাহলে হয়তো তুমিও আপন হতে শুরু করেছিলে। নিঃশ্বাসের ভাষাগুলো যদি স্পষ্ট কানে বাজতে থাকে তাহলে হয়তো আমিও প্রণয়িনী হয়ে উঠেছিলাম।
ঠোঁটবিদ্যার উল্কি যদি সকল ভয়কে ছাপিয়ে স্বর্গ-মর্ত্যের তফাৎ বুঝে নিতে পারে, তাহলে আমিও হয়তো প্রেমিক আর পুরুষের সঠিক ব্যবধান করতে শিখেছিলাম।
শরীরের ব্যাকরণ যদি হুবহু পড়তে পারি, তবে কী আমি ঋদ্ধ হতে পেরেছি আমার পূর্বসূরিদের মতোন? জানি না, বুঝি না, ভাবিও না ... কেননা আমি সম্পর্কের অধিকারটাই আয়ত্ত করতে পারিনি কখনও। না দখল দিতে পেরেছি, না দখল নিতে পেরেছি।
ভালোবাসার ব্যাকরণ পাঠে খুবই অমনোযোগী আর দুর্বল শিক্ষার্থী আমি। সে কারণে ‘ভালোবাসা’ আসলে ব্যক্তিবাচক নাকি বস্তুবাচক, নাকি অধরা কিছু এখনও বুঝে উঠতে পারিনি।
কখনও মনে হয় মানুষটাই হয়তো ভালোবাসা আবার কখনও মনে হয় বিশেষ সব অনুভূতিগুলোই হয়তো ভালোবাসা। তাই সংজ্ঞা নির্ণয়ের এই চক্করে পড়ে ‘হয়তো’ নামক দ্বিধান্বিত শব্দটি আর বাদ দিতে পারলাম না।
যাক গে সব মস্তিষ্কের বাতলামি। সৃষ্টির শেষ দিন অবধি থেকে যাক এই ধ্রুব ভালোবাসা।
আর আমি? —আমি নাহয় চির সন্দিহান মনটাকে নিয়ে এপার-ওপার করতে থাকি পেন্ডুলামের মতো।