বছর ঘুরছে, সঙ্গে বাড়ছে বয়সও। ধীরে ধীরে বার্ধক্যের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছেন। বয়সকে ধরে রাখা সম্ভব হয় না। তবে বয়সের সঙ্গে বেড়ে যাওয়া বার্ধক্যকে তো ধরে রাখতে পারেন। এর জন্য মনের বয়সে তারুণ্যকে ধরে রাখতে হবে। বাস্তব বয়সের সংখ্যা যতই বাড়ুক, মনের বয়সকে ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্রন্টিয়ার্স ইন এজিং নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত এক সমীক্ষা জানায়, মনের বয়স কম থাকলে বাস্তব বয়সের সংখ্যা বাড়লেও মানুষের বার্ধক্য ধীরে ধীরে হয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাজের গতি কমিয়ে দেওয়া মানুষের ভুল সিদ্ধান্ত। বরং কাজের গতি ঠিক রাখলে মানুষের মস্তিষ্ক তরুণ থাকে এবং বার্ধক্যও দেরিতে আসে। মেডিকেল ইন্টারনেট রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় জানা যায়, মহামারি চলাকালীন বয়স্ক ও প্রাপ্তবয়স্করা অন্য যেকোনো বয়সের তুলনায় বেশি কাজ করেছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ব্যায়াম হতে পারে সময়ের সঙ্গে লড়াই করার সেরা উপায়। প্রচুর গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্যায়াম মস্তিষ্ককে তরুণ রাখতে সাহায্য করতে করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে পারে। ব্যায়াম করলে বয়স বাড়লেও বার্ধক্যকে বিলম্বিত করা যায়।
কিছু ব্যায়াম দীর্ঘায়ু দেয় এবং বার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। বয়স ৪০ পেরুলে আপনার শরীরকে নতুন আকার দেওয়ার জন্য নিয়মিত অনুশীলন প্রয়োজন। মাত্র ৪ উপায়ে বা কৌশলে আপনি বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিতে পারবেন। সেই কৌশলগুলো জেনে নিন এই আয়োজনে।
ফিটনেস স্ন্যাকস: সিড়িতে ওঠা-নামা
প্রায়ই সময়ই ব্যায়াম করার সময় পাচ্ছেন না। কোনো সমস্যা নেই, এর পরিবর্তে সারা দিন কিছু ‘ফিটনেস স্ন্যাকস’ করতে পারেন। অ্যাপ্লাইড ফিজিওলজি, নিউট্রিশন অ্যান্ড মেটাবলিজম-এ প্রকাশিত এই সমীক্ষায় জানা যায়, দিনে তিনবার সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা করলে হৃদরোগসংক্রান্ত স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং দীর্ঘায়ু পাওয়া যায়।
ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির কাইনেসিওলজির অধ্যাপক জ্যেষ্ঠ গবেষণা লেখক মার্টিন গিবালা বলেছেন, “যারা অফিসে কাজ করেন বা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে থাকেন তারা সকালে, দুপুরের এবং সন্ধ্যায় সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা করতে পারেন। এটি একটি কার্যকর ওয়ার্কআউট।”
সাইক্লিং করেও শক্তিশালী হওয়া যায়। গবেষণা লেখক মার্টিন পরামর্শ দেন, ‘প্রতিদিন আপনি সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা করুন কিংবা সাইকেল চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছান দুটোই বেশ কার্যকর।‘
দিনে দীর্ঘ সময় দৌড়ানো
সকালে কিংবা বিকেলে দীর্ঘ সময় দৌড়ানোর অভ্যাস করুন। প্রিভেনটিভ মেডিসিনে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় দৌড়ানো অত্যন্ত সক্রিয় থাকা ব্যক্তিরা তাদের বয়সী অন্যদের তুলনায় সেলুলার স্তরে আক্ষরিকভাবে কম বয়সী হয়ে থাকে। অল্প বয়স্ক মানুষের কোষে লম্বাটে টেলোমেরেস থাকে। এই গবেষণায় প্রমাণ হয়, যারা ব্যায়াম করেন তাদের প্রায়শই বয়সের তুলনায় অনেক বেশি টেলোমেয়ার থাকে।
গবেষকরা পরামর্শ দেন, একজন পুরুষ সপ্তাহে ৫ দিন প্রতিদিন প্রায় ৪০ মিনিট জগিং করা স্বাস্থ্যের জন্য় উপকারী। যা তাকে সক্রিয় রাখে এবং উন্নত জীবনধারা অর্জনে সাহায্য করে। অন্যদিকে একজন নারীর একই সাপ্তাহিক ফ্রিকোয়েন্সিতে ৩০ মিনিট দৌড়ানো উচিত। তাদের শরীর তুলনামূলক বসে থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় বেশি সক্রিয় থাকে। বয়সও প্রায় ৯ বছর পেছনে থাকে।
বিওয়াইইউর ব্যায়াম বিজ্ঞানের অধ্যাপক ল্যারি টাকার বলেন, “বয়স ৪০ হওয়া মানেই এই নয় যে আপনি মনের দিক থেকেও ৪০ বছর বয়সী হবেন। আমরা যত বেশি শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকি, আমাদের দেহে জৈবিক বার্ধক্য কম হয়।”
ঘণ্টায় অন্তত ৩ মাইল হাঁটুন
হাঁটা আপনার শরীরকে দুর্দান্ত বোধ করাবে। দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে চাইলে হাটার অভ্যাস করুন। বৈজ্ঞানিক জার্নালে মায়ো ক্লিনিক প্রসিডিংসে প্রকাশিত এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, যারা দ্রুত গতিতে হাঁটেন, তাদের জীবন দীর্ঘতর এবং স্বাস্থ্যকর হয়। প্রতি মিনিটে প্রায় ১০০ কদম বা ঘণ্টায় ৩ মাইল হাঁটার অভ্যাস করুন। এই অভ্যাস আপনার বয়সকে ধরে রাখবে এবং সুস্বাস্থ্য দেবে।
এই গবেষণায় ৪ লাখ ৫০ হাজর মানুষ অংশ নেন। যারা দ্রুত গতিতে হাঁটতেন তারা প্রায় ৮৬ বছর বয়স পর্যন্ত আয়ু পেয়েছেন। অন্যদিকে যারা ধীরগতিতে হেটেছেন তারা প্রতিপক্ষে ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। একইভাবে দ্রুত হাঁটা নারীরা ৮৭ বছর বয়স পর্যন্ত আয়ু পান এবং ধীরগতিতে হাঁটা নারীরা গড়ে ৭২ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।
প্রধান গবেষণা লেখক টম ইয়েটস জানান, “ফলাফলগুলোতে বোঝা যায়,ব্যক্তির আয়ুষ্কালের ওপর শরীরের ওজন নির্ভরশীল। এটি শারীরিক সুস্থতার আপেক্ষিক গুরুত্বকে স্পষ্ট করে। দ্রুত হাঁটার অভ্যাস ব্যক্তির জীবনে কয়েক বছর যোগ করতে পারে।”
পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান
বাড়িতে পোষাপ্রাণী থাকলে বিভিন্ন উপায়ে আপনাকে তরুণ এবং সতেজ রাখবে। পোষাপ্রাণী আপনার দীর্ঘ জীবনকাল পায়। সায়েন্টিফিক রিপোর্টে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, পোষাপ্রাণীর মালিকদের মৃত্যুর সম্ভাবনা ৩৩ শতাংশ কম ছিল।
গবেষণার সিনিয়র লেখক টোভ ফল ব্যাখ্যা করেন, “পোষাপ্রাণীর মালিকরা অধিক সক্রিয় থাকেন। তারা প্রাণীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। প্রাণীদের সঙ্গে খেলাধুলা করেন। প্রাণীর যত্ন নেন। তাদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ প্রাপ্ত ফলাফলের ব্যাখ্যা হতে পারে।”
জার্নাল অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড কমিউনিটি হেলথ-এ প্রকাশিত গবেষনায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণীর মালিকরা ৪টি ঋতুতেই সক্রিয় থাকে। প্রায় ৩ হাজার ব্যক্তির উপর এই গবেষণা চালানো হয়। ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক অ্যান্ডি জোনস বলেন, “পোষাপ্রাণী নিয়ে প্রতিদিন হাটতে যাওয়া ব্যক্তিরা শারীরিকভাবে বেশি সক্রিয়।”
সূত্র: ইট দিস নট ডেট