অ্যাংজাইটি মানে উদ্বিগ্ন হওয়া। বড়দের মধ্যে এই রোগ প্রায়ই দেখা যায়। তবে শিশুরাও অ্যাংজাইটিতে ভোগে। শিশুরা যখন অন্যের সঙ্গে মিশতে পারে না, ভীত থাকে, অস্থিত থাকে তখন বুঝবেন তার অ্যাংজাইটির সমস্যা হচ্ছে। যার কারণে বাচ্চারা একাকীত্বে ভুগতে পারে।
বাচ্চাদের মধ্যে অ্যাংজাইটি হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, সেরোটোনিন ও ডোপামিন এমন দুটি নিউরোট্রান্সমিটার, যার ক্ষরণ বৃদ্ধি পেলে বাচ্চাদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়। তাছাড়া বংশগত বা পরিবারগত কারণেও অ্যাংজাইটি হতে পারে শিশুদের। বাবা-মায়ের মধ্যে থাকলে শিশুদেরও হতে পারে। জীবনের কোনো দুর্ঘটনাও বাচ্চাদের অ্যাংজাইটি বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া অন্যের কাছে হাসির পাত্র হওয়া, ব্রোকেন ফ্যামিলির শিশুরা, উপেক্ষিত বা বঞ্চিত হওয়া, অপব্যবহারপাওয়া শিশুরাও অ্যাংজাইটির শিকার হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশুর মধ্যে অ্যাংজাইটির লক্ষণ বোঝা যায় কিছু উপসর্গে। যদি শিশুর হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়, হাত-পা কাঁপা শুরু হয়, শিশুর শক্তি কমে যেতে থাকে, ক্লান্তিবোধ হয়, ঘাম ঝরে, পেশীতে ব্যথা হয় তবে বুঝতে হবে এটি অ্যাংজাইটির লক্ষণ। তাছাড়া শিশুর মধ্যে আবেগপ্রবণ হওয়ার লক্ষণও দেখা যায়। শিশুরা এই সময় অস্থির থাকে, কথা বলতে চায় না, বিরক্তিবোধ করে, একাকীত্ব বোধ রাড়ে, মনোযোগের অভাব হয়, স্কুলে যেতে চায় না, কারো সঙ্গে মেলামেশা করতে চায় না এবং সবসময় ভীত থাকে। এমনকি অতিরিক্ত নার্ভাস ও মানসিক চাপের মধ্যেও থাকতে দেখা যায় শিশুদের।
শিশুদের অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার সারিয়ে তোলার পক্ষে দ্রুতই চিকিত্সার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ অ্যাংজাইটি থাকলে তা শিশুর ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলবে। শিশুর মানসিক বিকাশ ভালোভাবে হবে না। তাই শিশুর অ্যাংজাইটি সারিয়ে তোলার জন্য বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু কাজ করতে হবে।
- নিজের শিশুকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। শিশুকে ভালোবাসা ও যত্ন করে বড় করে তুলতে হবে।
- অভিভাবক হিসেবে আপনাকেও শান্ত থাকতে হবে। নিজের সন্তানের সামনে শান্ত ও সংযত থাকলে শিশুরাও সেই শিক্ষা পাবে।
- শিশুরা কোনও সমস্যায় পড়লে সমাধানে চেষ্টা করুন। চিন্তিত না হয়ে সমস্যা সমাধান করতে শেখান।
- তাদের হিংস্র আচরণ দেখলে বা কোনো পরিস্থিতির প্রতি ভীতি সঞ্চার হতে দেখলে তাকে সহযোগিতা করুন। সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে শেখান। হিংস্র আচরণ করলে আদর দিয়ে তাকে শান্ত করুন।
- শিশুদের নিয়ে তাদের পছন্দের কাজগুলো করুন। বাচ্চাদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান। এতে আপনার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব সম্পর্ক হবে এবং তারা ধীরে ধীরে উদ্বেগ থেকে বেরিয়ে আসবে।
- শিশুর মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য় তাদের কাউন্সিলিং করুন। কথা বলুন। বিশেষজ্ঞদের সহায়তাও নিতে পারেন।
- সিবিটি বা কগনিটিভ বিহেভারিয়াল থেরাপির মাধ্যমে বাচ্চারা নিজের আচরণ পরিবর্তন করতে পারে। যা অ্যাংজাইটি মোকাবিলা করতে সহজ হয়।
- কোনো কিছুতেই কাজ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাংজাইটি ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
সূত্র: হেলথ লাইন