কিংবদন্তী লতা মঙ্গেশকর এবং সন্ধ্যা মুখার্জির পর, চলে গেলেন সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে ৬৯ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাপ্পি লাহিড়ী। ভক্তদের মতো ভারতীয় উপমহাদেশের তারকারাও তার চলে যাওয়ায় শোক জানিয়েছেন। খুলে দিয়েছেন স্মৃতির ডালা-
রুনা লায়লা: বাংলার প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার সঙ্গে বাপ্পি লাহিড়ীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। তার মৃত্যুতে মর্মাহত রুনা লায়লা বলেন,‘‘অসাধারণ প্রতিভাবান সুরকার ও সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ীর মৃত্যুর খবর শুনে আমি ভীষণ মর্মাহত ও দুঃখিত। তাঁর সঙ্গে আমার বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গান এবং গানের অ্যালবামে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে, যার মধ্যে একটি ছিল সুপার হিট অ্যালবাম “সুপার রুনা”। আমরা দুজন একসঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন মঞ্চে গান গেয়েছি। সবকিছুর ওপরে তিনি ছিলেন আমার বন্ধু। ভীষণ মজার একজন প্রিয় মানুষ। এমন একজন প্রতিভাবানকে বিদায় জানানো কঠিন, তিনি নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে পারতেন। গত কয়েক দিনে আমি লতা দিদি, সন্ধ্যা মুখার্জি দিদি এবং এখন বাপ্পিজিকে বিদায় জানিয়েছি। তাঁদের হারানোর শোক প্রকাশের ভাষা নেই আমার। আমি পুরোপুরি স্তব্ধ ও বিষাদগ্রস্ত।’’
রুনা লায়লা আরও বলেন, ‘‘১৯৭৯ সালে প্রকাশ কাপুর পরিচালিত বলিউডের “জান-এ-বাহার” ছবিতে বাপ্পিজির সুর-সংগীতে একটি গান গেয়েছিলাম। এর শিরোনাম ছিল “মার গায়ো রে রসগোল্লা খিলাই কে মার গায়ো রে”। এতে মোহাম্মদ রফি সাহেব ও আনন্দ কুমারও কণ্ঠ দেন। গওহর কানপুরির লেখা গানটি বেশ আলোচিত হয়েছিল।’’
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: টালিউড অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা কোন ভাবেই বাপ্পীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। ঋতুপর্ণা বলেন, ‘‘বাপ্পীদা নেই, আমি ভাবতেই পারছি না। কিছু বলার মতো অবস্থা নেই। শুধু বলতে পারি যে আমাদের সংগীত জগৎ একেবারে শূণ্য হয়ে গেলো। এতো স্নেহ, আদর, ভালোবাসা আমি জানি না কেউ দিতে পারে কি না। তিনি আমার পরিবারের একজন। পরম আত্মীয় চলে গেল আমাদের। আমার পরিবারের এক দাদা চলে গেল।’’
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বাপ্পি লাহিড়ীর আচমকা চলে যাওয়ায় শোকে বিপর্যস্ত অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বাপ্পির সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তের কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত এই অভিনেতা। জনপ্রিয় সুরকার-সংগীতশিল্পীর আকস্মিক প্রয়াণ নিয়ে প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘সকালবেলা এই খবর পেয়ে আমি স্তম্ভিত। বাপ্পিদা চলে যাবেন, আমি সত্যি ভাবতে পারিনি। 'অমর সঙ্গী' থেকে শুরু করে আমার অনেক ছবিতে বাপ্পিদা গান গেয়েছেন। তার বাইরেও আমার হিন্দিতে যে কয়েকটি ছবি, তার সবগুলোতে বাপ্পিদার সুর ছিল। বাংলাতেও আমাদের জুটির প্রতিটি গান হিট।’’
রানি মুখার্জি: বাপ্পি লাহিড়ীর আকস্মিক চলে যাওয়া মানতে পারছেন না বলিউড অভিনেত্রী রানি মুখার্জি। তাঁর কথায়, “ভারতের একজন দামি শিল্পী চলে গেলেন।নজরকাড়া শিল্পীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি নিজেই নিজেকে গড়েছিলেন। ছেলে, স্বামী, বাবা— সব ভূমিকাই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।”
রানির ভাষায়, “আমার মা আর বাপ্পি আঙ্কেল ছোটবেলা থেকে বন্ধু। তাঁর চলে যাওয়া আমার পরিবারের কাছে ব্যক্তিগত ক্ষতি। আমার মা ভেঙ্গে পড়েছেন। পুরো বিশ্ব যখন শোক পালন করছে, আমার মনে পড়ছে বাপ্পি আঙ্কেলের সঙ্গে কাটানো শৈশবের দিনগুলির কথা। তার হাসিমুখ আর দয়ালু ব্যক্তিত্ব সারা জীবন আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল থাকবে।”