চিরসবুজ নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। ১৯৭৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘বসুন্ধরা’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। সুভাষ দত্তের সেই সিনেমা দিয়ে নায়ক হিসেবে আগমন ঘটে ইলিয়াস কাঞ্চনের। ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন নায়িকা ববিতা। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ফেসবুক লাইভে এসে ভক্তদের সঙ্গে নিজের রোমাঞ্চকর তথ্য শেয়ার করলেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, “ব্যস্ততার কারণে অনেক দিন ধরে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি না, ভালো লাগছিল না। আগামীকাল (শুক্রবার) যেহেতু ছুটির দিন, তাই বৃহস্পতিবার দেরি করে ঘুমালেও ক্ষতি নেই। তাই ফেসবুক লাইভে চলে আসলাম।”
চিরসবুজ এই নায়ক বলেন, “আমি আমার জীবনের কিছু মজার ঘটনা ও দুর্বলতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব, যার মধ্যে অন্যতম একটি আমার আঙুল। ছোটবেলায় আমার আঙুল দুটো পুড়ে গিয়েছিল। কিন্তু শুধু পুড়ে যাওয়ার কারণে আমার আঙুল দুটোর এতো ক্ষতি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে আরেকটি কারণ।”
ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে কাঞ্চন বলেন, “আমার বাবারা সাত ভাই ছিলেন। আমার বাবা ছিলেন চার নম্বর। আমি তখন হামাগুড়ি দিয়ে চলি। তখন বাবার ৫ নম্বর ভাই বিয়ে করেন। আমার মা, বাবাদের কাছে শুনি, সে সময় গরম চুলায় আমি হাত দিয়ে দুটি আঙুল পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। তখন ঘরে এসেছে বাবার ভাইয়ের নতুন বউ। তিনি বড় ঘোমটা পরে বাড়িতে হাঁটতেন।”

স্মৃতিচারণ করে কাঞ্চন আরও বলেন, “একদিন আমি পোড়া আঙুল দিয়ে হামাগুড়ি দিচ্ছিলাম আর উনিও বড় ঘোমটা দিয়ে হাঁটছিলেন। তারপর যা হলো তার পা আমার পোড়া আঙুলের মধ্যে পড়ল। এতে আমার আঙুল দুটো আরও থেতলে গেল। বড়রা বলেছিল, ওই সময় চাচির পায়ের চাপা খাওয়ায় আমার পোড়া নরম আঙুল চাচির পায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ লেগেছিল।” এরপর থেকেই এ খুঁত সঙ্গে নিয়েই আমি বড় হয়েছি,’ যোগ করেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা।
অভিনেতা হিসেবে সিনেমার ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “অল্পবয়সে যখন নায়ক ছিলাম, তখন অনেক সতর্ক হয়ে কাজ করেছি। যেন পর্দায় আমার এ দুর্বলতা কখনও দেখা না যায়। তবে এখন আমি সে গোপন কথাটা বলছি। কারণ এখন তো আর আমি নায়ক নই।”

‘বেদের মেয়ে জোছনা’ খ্যাত এই নায়ক বলেন, “শুনেছি বলিউডের জনপ্রিয় হৃতিক রোশনেরও আঙুলের সমস্যা রয়েছে। তার এক হাতে ৫ আঙুলের জায়গায় ৬ আঙুল। তিনিও পর্দায় এ সমস্যা ভক্তদের কাছে আড়াল করেন সতর্কভাবেই। কারণ ভক্তরা নায়কদের পারফেক্ট দেখতেই অভ্যস্ত। নায়কের দুর্বলতা তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে এতদিন পরে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নিজের এ দুর্বলতা আমি শেয়ার করলাম, কারণ এখন না বললে হয়তো কখনই আর এ মজার ঘটনা কিংবা নিজের দুর্বলতা বলা হবে না।”
ফেসবুক লাইভে গ্রাম জীবনে বেড়ে ওঠা আরও অনেক অভিজ্ঞতার কথাও ইলিয়াস কাঞ্চন ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন। জীবনে অনেকবারই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময় আল্লাহর কৃপায় বেঁচে গেছেন এমন রোমাঞ্চকর ঘটনাও ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন গুণী এ শিল্পী।
চার প্রজন্মের নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সত্তর দশকের নায়িকা শাবানা থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর পপি-মুনমুনের নায়ক হয়েও পর্দায় এসেছেন তিনি। প্রায় ৪০০ সিনেমার সফল নায়ক তিনি।