দুই বাংলায় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জনপ্রিয়তার কমতি নেই। তার জীবদ্দশায় যেমন ছিল না, তেমনি আজও।
এই অভিনেত্রীর প্রয়াণের এক দশক হলো আজ। ২০১৪ সালের এই দিনে (১৭ জানুয়ারি) না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।
সুচিত্রা সেনের প্রকৃত নাম রমা দাশগুপ্ত। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনায় সুচিত্রা সেন জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাবনা শহরের বাড়িতে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান তারা।
১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ সিনেমার মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তি পায়নি। পরের বছর উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এরপর থেকে বাংলা সিনেমায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এই জুটি।
পর্দায় সুচিত্রা সেনের নায়ক হিসেবে অভিনয় করে সবচেয়ে সফল হয়েছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। উত্তম-সুচিত্রা জুটির ৩০টি বাংলা সিনেমা সাফল্য পায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘সবার উপরে’, ‘পাপমোচন’, ‘শিল্পী’, ‘সাগরিকা’, ‘পথে হল দেরি’, ‘হারানো সুর’, ‘গৃহদাহ’, ‘প্রিয় বান্ধবী’ ইত্যাদি।
সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর ১৯৭৮ সালে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান সুচিত্রা। কোনো এক অজানা কারণে প্রায় ৩৬ বছর কলকাতায় একাকী থাকতেন বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে।
১৯৪৮ সালে কলকাতার শিল্পপতি আদিনাথ সেন তনয় দিবানাথ সেনের সঙ্গে ঘর বাঁধেন সুচিত্রা সেন। তার একমাত্র মেয়ে মুনমুন সেন। দুই নাতনি রাইমা সেন ও রিয়া সেনও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
সুচিত্রা সেনই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে কোন আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পান। ‘সাত পাকে বাঁধা’ সিনেমার জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।
১৯৭২ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ পান সুচিত্রা সেন। এছাড়া ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গবিভূষণ সম্মাননা দেওয়া হয় তাকে।
২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য সুচিত্রা সেন মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সশরীরে পুরস্কার নিতে দিল্লি যাওয়ায় আপত্তি জানানোর কারণে তাকে পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮২ বছর বয়সে সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়।
সেদিন কলকাতার গোর্কি সদনের পাশের রাস্তায়, মিন্টো পার্কের সামনে, বেসরকারি হাসপাতাল বেলভিউয়ের সামনের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। সেখানে জনসমুদ্র। কলকাতায় সেদিন একটা গান সারা দিনই শোনা গেছে, ‘আরও কিছুটা সময় না হয় রহিতে কাছে...।’