শীতকালীন নানা ফুলের কারণে এ সময় নার্সারিতে চারা বিক্রি অন্য সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। মানিকগঞ্জে বেড়েছে শীতকালীন ফুলের চারা বিক্রি। এর ফলে লাভবান হচ্ছেন জেলার নার্সারি মালিকরা। চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ, ডালিয়া, কসমস, সিলভিয়া, গ্লাডিওলাস, গাদা ফুলের চারা বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নার্সারি মালিকেরা।
জানা গেছে, ঘিওর উপজেলাসহ মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, শিবালয়, সদর ও সাটুরিয়া উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিক ফুলের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা মহামারিতে গত বছর সব ফুলেরই বাণিজ্যিক বিপণন কিছুটা স্থবির ছিল। তবে চলতি বছর এ ফুলের আবাদ ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে পেয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জেলার প্রায় অর্ধশত নার্সারি মালিক বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চারা আবাদ ও বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিক ফুলের আবাদে গোলাপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চন্দ্রমল্লিকা।
সিঙ্গাইরের ফোর্ডনগর এলাকার ফুলচাষি মো. আজিজ বলেন, “আমি চলতি বছর ৯০ শতাংশ জমিতে ফুলের আবাদ করেছি। গোলাপ, কসমস ফুলের সঙ্গে এবার চন্দ্রমল্লিকা ফুল যুক্ত করেছি। যদি দেশের অবস্থা স্বাভাবিক থাকে, তাহলে খরচ বাদে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ হবে।”
ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরীর সিফাত নার্সারির মালিক আব্দুর রশিদ জানান, এবার সবচেয়ে বেশি বিক্রিত চারার মধ্যে রয়েছে হাইব্রিড জাতের গাদা, রক্তগাদা, কুইন সুপার গাদা, চন্দ্রমল্লিকা ও গোলাপের চারা। প্রকার ভেদে প্রতিটি ৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া হাইব্রিড জাতের ডালিয়া খুচরা ২০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ২০ থেকে ৫০ টাকা, ক্যালেন্ডুলা ৩০, জিনিয়া ২০, দোপাটি ২০, সিলভিয়া ১০, রক্তজবা ৮০ থেকে ১৫০ টাকা, চায়না টগর ৫০, কসমস ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
বানিয়াজুরীর গৃহবধূ দিনা আহমেদ বলেন, “আমার বাগানে ও বারান্দার টবে রোপণ করা ফুল গাছের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকার নানান রং বেশি ভালো লাগে। এ ফুল অনেক দিন টবে ফুটে থাকে; ফুলও ফোটে অনেক। অনেকেই শখ করে ছবি তোলেন এই ফুল গাছ নিয়ে।”
ঘিওর উপজেলা সদরের নার্সারি ব্যবসায়ী স্বরূপ মিয়া বলেন, “শীতের সময় হরেক রকম ফুলে ভরে ওঠে বাগান। চলতি বছর দেড় লাখ টাকার চারা উৎপাদন করেছি। এ পর্যন্ত ২ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছি। এখনো যে চারা রয়েছে তাতে ৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হবে।”
মানিকগঞ্জ সদরের ফুল ব্যবসায়ী পুষ্পকাননের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “শীত মানেই ফুলের উৎসব। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, প্রিয়জনকে উপহার এবং ফুলদানি সাজানোর জন্য ফুল কিনে থাকেন। করোনা মহামারির দুঃসময়ে গত দুই বছর অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফুলের বেচাকেনা অনেক কম ছিল। এ বছর কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠছি।”
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন জানান, শীত মৌসুমে নার্সারিতে বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি ফুলের চারা উৎপাদন করা হয়। করোনার ধাক্কা সামলিয়ে চলতি বছর ফুল চাষে চাষি ও নার্সারি মালিকেরা লাভবান হচ্ছেন। দিন দিন ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন শিক্ষিত যুবকরা।