জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নদীতে সব ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার একশ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এই একশ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।
এ সময় সব রকমের ইলিশ সংরক্ষণ, আহরণ, পরিবহন, বাজারজাত ও মজুত নিষিদ্ধ থাকবে। আইন অমান্য করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৬৫ হাজার জেলে রয়েছে। এসব জেলে মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ১ মার্চ থেকে শুরু জাটকা রক্ষা কার্যক্রম। এপ্রিলের ৩০ তারিখ পর্যন্ত টানা দুই মাস নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এই দুই মাস নদীতে নামতে না পারায় কিস্তির বেড়াজালে আটকে পড়বেন জেলেরা। প্রতিবছর অভয়াশ্রমের আগে বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধের চিন্তায় তাদের কপালে পড়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। তাই নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন এসব কিস্তি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জেলেরা।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ২০০৩-০৪ সাল থেকে অক্টোবর মাসে ‘মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম’ ও ‘মার্চ-এপ্রিল’ দুই মাস ‘জাটকা নিধন রক্ষা কার্যক্রম’ বাস্তবায়ন করে আসছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার এই সময় জেলেরা যাতে নদীতে মাছ শিকারে না নামে তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু জেলে নদীতে নেমে পড়েন। যার অন্যতম কারণ হিসেবে তারা দাবি করেন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ।
স্থানীয় জেলে হুমায়ুন, হারুন, আনোয়ার, আসমত মাঝি ও সফিক উল্যা বলেন, যেহেতু আমরা নদীতে মাছ ধরতে নামতে পারি না বা অন্য কোনো কাজও জানি না তাই আমরা কিস্তিও দিতে পারি না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, অন্তত নিষেধাজ্ঞার এই সময়গুলোতে যাতে এনজিওর এসব কিস্তিগুলো বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করে। তাহলে অনেক জেলেই নদীতে নামবে না বলে আমরা মনে করি।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৩ জন। এর মধ্যে কার্ডধারী জেলে রয়েছে ৩৮ হাজার ৯১২ জন। আর মেঘনা নদীতে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৩০ হাজার ৮৫৩ জন জেলে। নিষিদ্ধ সময়ে মেঘনা নদীতে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত ৩০ হাজার ৮৫৩ জন জেলেকে প্রথম কিস্তিতে ৪০ কেজি করে দুই মাস চাল দেওয়া হবে। পরে বরাদ্দ আসলে আবারও তাদের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে।
এদিকে জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের সরকারি যে সহায়তা প্রদান করা হয় তা-ও তারা ঠিকমতো পান না। প্রত্যেক জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও জেলেরা চাল পায় ২৫-৩০ কেজি। বাকি চালগুলো চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা রেখে দেন। এছাড়া প্রকৃত অনেক জেলেই সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত রয়ে যায়। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা প্রকৃত জেলেদের নাম তালিকায় না দিয়ে তাদের আত্মীয়স্বজনদের নাম তালিকায় দিয়ে তাদের সরকারি সহায়তা দিয়ে দেয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, ইলিশের উৎপাদন ও জাটকা সংরক্ষণের জন্যই দুই মাস নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জেলেরা যেন নির্দিষ্ট সময়ে মেঘনায় মাছ শিকার করতে না পারে, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নদীতে মৎস্য বিভাগ, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। জাটকা মাছ নিধন করা থেকে জেলেদের বিরত থাকতে হবে। জাটকা মাছ বড় হওয়া সুযোগ পেলে ইলিশের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পাবে। কোনো অবস্থাতেই এই দুই মাস নদীতে জাল ফেলা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।