গত বছরের অতিবর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বীজতলা নষ্ট হয়েছিল শরণখোলার অধিকাংশ চাষির। তখন তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে বীজতলা সংগ্রহ করে আবার তা রোপণ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। দূরদূরান্ত থেকে সংগ্রহ করা বীজ রোপণ করে কেউ ভালো ফলন পান, আবার কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
পার্শ্ববর্তী আমড়াগাছিয়া হাট থেকে বীজ কিনে জমিতে রোপণ করলেও সেবার ভালো ফলন পাননি শরণখোলা উপজেলার মঠেরপাড় গ্রামের চাষি রফিকুল তালুকদার। ক্ষতিগ্রস্ত রফিকুল তালুকদার ধানের ভালো ফলন না পেয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের শরণাপন্ন হয়ে তাদের পরামর্শ চান। সেখানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম তার ক্ষেতে গিয়ে মাটি পরীক্ষা করে চিনাবাদাম চাষের পরামর্শ দেন। বাদাম চাষের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় প্রায় ৪০ শতক (১২ কাঠা) জমিতে প্রথমবারের মতো বাদাম চাষ শুরু করেন তিনি।
শরণখোলা উপজেলার মঠেরপাড় গ্রামের চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, “ধান চাষে মার খেয়ে বাদাম চাষের কথা শুনে প্রথমে ভয় পাই। তারপরও কৃষি বিভাগের ভাইদের কথায় আমি ও আমার প্রতিবেশী মোশারেফ হাওলাদার বাদাম চাষ শুরু করলাম। কৃষি বিভাগ থেকে বিনা মূল্যে বাদামের বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়। নিজের ১২ কাঠা জমিতে নিজেই চাষ করি। নিজেই পরিচর্যা করাতে তেমন কোনো খরচ হয়নি।”
জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মণ বাদাম উৎপাদন হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রফিকুল। চার হাজার টাকা মণ বিক্রি হলেও তার উৎপাদিত ৫০ মণ বাদাম বিক্রি হবে দুই লক্ষাধিক টাকায়। কম সময়ে, কম পরিশ্রমে এমন অকল্পনীয় লাভের স্বপ্নে তার চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক।
শরণখোলায় এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বাদাম চাষে বাম্পার ফলন ও চাষি রফিকুলের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প এলাকায় অন্য চাষিদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। অনেক চাষি বাদাম চাষে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন।
কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চাষি রফিকুল কৃষি অফিসে এলে আমি তার ক্ষেত দেখতে যাই। মাটি পরীক্ষা করে বেলে, দো-আঁশ মাটি চিহ্নিত করে তাকে বাদাম চাষের পরামর্শ দিই।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসিম উদ্দিন জানান, বাদাম চাষে তেমন সেচ ও পরিচর্যা লাগে না। শরণখোলা উপজেলায় সেচ সংকট থাকায় এখানে বাদাম চাষ করা যেতে পারে। কম সময়ে, কম পরিশ্রমে বেলে দো-আঁশ মাটিতে বাদাম চাষে অধিক লাভ করা সম্ভব।





































