• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
আটঘরিয়া পৌরসভা ও ৫ ইউপির নির্বাচন

প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে পাল্লা ভারী


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২১, ০৬:২৪ পিএম
প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে পাল্লা ভারী

পাবনার আটঘরিয়া পৌরসভা ও পাঁচ ইউনিয়নের নির্বাচন আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকা, বিদ্রোহী আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পাল্লা ভারী হয়ে উঠেছে।

আটঘরিয়া পৌরসভায় নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র শহীদুল ইসলাম রতনের ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলামের বিরুদ্ধে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে প্রভাববিস্তারসহ প্রচার-প্রচারণায় বাধা, হুমকি ধামকি, মারধরসহ প্রতিপক্ষের প্রার্থী এবং সমর্থকদের প্রচাররত অবস্থায় এলাকা থেকে বিতাড়িত করার অভিযোগ উঠেছে।   

এদিকে উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমিন হোসেন চঞ্চলের কর্মী-সমর্থকদের হামলা ও মারপিটে বিদ্রোহী প্রার্থী কেএম শাহীনের কর্মী সেলিম নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্রমশ নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দলীয় প্রতীকের বাইরে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে ভীতি, শঙ্কা আর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা আর উৎকণ্ঠা। 

বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ, এ উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরপরই দলীয় প্রভাব, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৌর ও উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম। তার বাবা বর্তমান মেয়র শহীদুল ইসলাম রতন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই তাদের হুমকিধামকি, ধাওয়া ও হামলায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ কর্মী-সমর্থকরা। প্রচারণপ্রচারণায় বাধা, ধাওয়া, হামলা ও মারপিটের ঘটনা অহরহ ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের। 

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মেয়র পদের বিদ্রোহী জগ প্রতীকের মো. ইশারত আলী বলেন, “তফসিল ঘোষণা ও প্রতীক বরাদ্দের পর পৌর এলাকার একাধিক স্থানে তিনিসহ কর্মী সমর্থকরা বাধা, হামলা, ধাওয়া ও মারধরের শিকার হয়েছেন। এগুলো নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলামের উপস্থিতিতে হয়েছে।”

ইশারত আলীর ভাতিজা আনোয়ার হোসেন বলেন, “২০ ডিসেম্বর আটঘরিয়া বাজারে গণসংযোগ ও প্রচারণার সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। তাদের বেধরক মারপিটে ৭ জন আহত হয়। এদের মধ্যে দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।” 

আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আশরাফ উজ্জামান জুয়েল বলেন, “নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন আমাদের পদে পদে বাধার সন্মুখিন করছে। প্রচারপ্রচারণা, ভোট চাওয়া সব ক্ষেত্রে বাধাসৃষ্টি করছে। আমার কর্মী সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের হুমকিধামকি দিচ্ছে। সব সময় আতঙ্ক আর শঙ্কার মধ্যেই রয়েছি। আমরা পৌর ও উপজেলাবাসী প্রভাবশালী বাবা-ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। কেউ কিছু বললেই তাদের উপর নেমে আসে নানা ধরণের জুলুম ও নির্যাতন।”   

নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম রতন বলেন, “জনপ্রিয়তা আছে বলেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। দলের শীর্ষ পদ পেয়েছি। আমার বিজয় নিশ্চিত জেনে নানা দিক দিয়ে নানাভাবে বিরোধিতা করা হচ্ছে। এটা নিছক অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়।” 

উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বলেন, “বাবা মেয়র প্রার্থী। সন্তান হিসেবে আমার দায়িত্ব আছে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে ভোট চাইবার। তাকে সহযোগিতা করবার। আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করা হচ্ছে। আদৌত এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি নির্বাচনী নিয়ম কানুন, আচরণবিধি সব মেনে ভোটারদের দ্বারে গিয়ে বাবার জন্য ভোট চাইছি। এটা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমার বলার কিছু নেই।” 

উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম কামাল বলেন, “দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছি। সব জায়গায় নৌকার বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠে, এমন কথা শুনলে আমার এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী নানা ভাবে নানা কৌশলে আমাকে পরাজিত করতে কুটকৌশল প্রয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এদের উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ ইন্ধন দিচ্ছে।” 

দেবোত্তর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাইমিন হোসেন চঞ্চল বলেন, “আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ ওই কর্মী স্টোক করে মারা গেছে। আর প্রতিপক্ষের লোকজন রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে মিথ্যা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। আইনগত তদন্তেই প্রমাণ হবে প্রকৃত ঘটনা কি ছিল।” 

মাজপাড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহম্মেদ খান বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকরা আমার নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ব্যাপক বাধার সৃষ্টি করছে। কর্মী-সমর্থকদের হুমকিধামকি, ভোটারদের চাপপ্রয়োগ, নৌকায় ভোট না দিলে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকিসহ নানা ভাবে হয়রানি করছে। আমি মৌখিক ও লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।”  

আটঘরিয়ার ৫ ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা সব ধরনের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা নিয়েছেন। প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীরা স্বতঃর্স্ফূতভাবে তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো বিশৃঙ্খলার অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে নির্বাচন কমিশনের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” 

পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, “পৌরসভার নির্বাচন ঘিরে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর বা অভিযোগ পাইনি। এখন পর্যন্ত পরিবেশ শান্ত রয়েছে। আশা করছি ইভিএমর মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।”

Link copied!