ছোটবেলা থেকেই ইঁদুর ধরার নেশা ছিল আনোয়ার হোসেনের (৬০)। শৈশবে মুয়া মলা খাওয়ার নেশায় এলাকার বিভিন্ন স্থানে গর্ত বের করে ইঁদুরের কেটে নেওয়া ধান বের করে নিতেন। তার এ নেশা এখন পেশা হিসেবে স্থান পেয়েছে।
গত ৩০ বছর ধরে ইঁদুর ধরে আসছে আনোয়ার হোসেন। কৌশল করে ইঁদুর ধরার জন্য বিভিন্ন লোকেরা তাকে ডেকে নিয়ে যান। এ জন্য সবাই তার মো. আনোয়ার হোসেন নামের পরিবর্তে নাম দিয়েছে ‘ইঁদুর আনোয়ার’। আর এ নামেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার।
আনোয়ার হোসেন জয়পুরহাট আক্কেলপুর উপজেলার ভট্টপলাশী গ্রামের মৃত আ. জোব্বার মঈনুদ্দিনের ছেলে। তার পরিবারে স্ত্রীসহ সদস্য সংখ্যা ৪। এর মধ্যে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে তার।
ইঁদুর আনোয়ার ছিলেন একজন গরীব ঘরের সন্তান। অভাবে পরে তার পরিবার ছোটবেলায় তাকে অন্যের বাড়িতে কাজের জন্য পাঠান। সেখানে তিনি মাঠে গরু চড়াতেন। ময়া মুড়ি খাওয়ার লোভে ফাঁকা মাঠে ধান কুড়াতেন। তখন বিভিন্ন জায়গায় ইঁদুরের গর্ত দেখে তা খুরে কেটে নেওয়া ধান বের করেন। শুধু তাই নয়, তিনি গর্তে থাকা ইঁদুর তিনি ধরে ধরে মেরে ফেলতেন। এমনকি বাসা-বাড়িতে অসহনীয় অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে ইঁদুর ধরার জন্য ডাকা হয় আনোয়ারকে।
একপর্যায়ে কৃষি অফিসারের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন ইঁদুরের লেজ জমা দিলে গম পাওয়া যাবে। তখন গম পাবার আশায় ইঁদুরের ধরে ধরে মেরে তার লেজ সংগ্রহ করা শুরু করেন।
ছোটবেলার এ নেশা এখন তার পেশা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। ধরার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়ে ইঁদুর মারা বিষ ও যন্ত্র বিক্রি করেন। এ থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে তার সংসার চালান।
জানা গেছে, আনোয়ার দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ইঁদুর ধরেন। প্রতি বছর প্রায় পাঁচ-সাত হাজার ইঁদুর নিধন করেন তিনি। এ সময়ে ৪-৫ লাখ ইঁদুর নিধন করেছেন। তখন (২০০০ সালের আগে) কৃষি অফিসারের পরামর্শে প্রতি বছর ইঁদুরের লেজ জমা দিয়ে পুরস্কার হিসেবে প্রথমে গম, পরে চাল এবং তারপর স্প্রে-মেশিন এবং বর্তমানে তিনি টাকা পান।
প্রতি বছর স্থানীয় কৃষি অফিসে ৫-৭ হাজার ইঁদুরের লেজ জমা দেন আনোয়ার। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫ লাখ লেজ জমা দিয়েছেন। ইঁদুর নিধনে বিশেষ অবদান রাখায় ২০০৪ সালে খামার বাড়ি ঢাকা থেকে একবার জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন আনোয়ার। ইঁদুর ধরে নিতে তার অনেক ডাক আসে। এর বিনিময়ে তাকে দেওয়া হয় চাল, খাবার অথবা টাকা।
মো. আনোয়ার হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এখন খাওয়া আর টাকা ছাড়া পাবলিক বুঝে না। সঙ্গে থেকে কৌশল শিখতে চায় না। কাউকে শিখানোর জন্য সঙ্গে নিতে চাইলে কয় টাকা দেওয়া হবে? আগে সেই হিসাব করে।
কৌশলের কথা তুলে ধরে আনোয়ার বলেন, “আমি ইঁদুর ধরতে তিন ধরনের কৌশল অবলম্বন করি। ইঁদুর যেহেতু ফসলের জন্য ক্ষতিকারক, এই ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে ইঁদুর নিধনের জন্য কৌশলগুলো যদি সরকারি ব্যবস্থাপনায় অন্যদের শিখাতে পারি তাহলে আমি সার্থক। এতে কৃষকের ফসল যেমন রক্ষা পাবে ঠিক তেমনি কৃষিতে দেশের উন্নতি হবে।”
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. রাহেলা পারভীন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা প্রতি বছর গ্রামপর্যায়ে সচেতনতামূলক ইঁদুর নিধনের প্রোগ্রাম করে থাকি। ইঁদুর আনোয়ার ফসলের ক্ষতি রক্ষার্থে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন। এক আনোয়ার দিয়ে সারা দেশে ইঁদুর নিধন সম্ভব নয়। তাই আমরা এর বিকল্প লোক তৈরি করতে খুব শিগগিরই উদ্যোগ নেব।”