• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

পঞ্চগড়ে দুই খুনের নেপথ্যে পরকীয়া ও ছিনতাই


পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪, ০৬:০৭ পিএম
পঞ্চগড়ে দুই খুনের নেপথ্যে পরকীয়া ও ছিনতাই
পরকীয়ার জেরে হত্যার ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার। ছবি : প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ে নিখোঁজের পর পৃথক ঘটনায় নুরল ইসলাম (৪২) ও টাবুল বর্মন (৪৮) নামের দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরকীয়া ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা এ তথ্য জানিয়েছেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।  

পুলিশ জানায়, গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন টাবুল। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) তার পরিবারের লোকজন পঞ্চগড় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর পুলিশ অভিযানে নেমে টাবুলের প্রতিবেশী মন্টু বর্মনের স্ত্রী ললিতা বর্মনের (৪০) সঙ্গে তার পরকীয়ার তথ্য পায়। পরে ললিতা, তার মেয়ে মনিকা রানী বর্মন (২০) ও মেয়েজামাই প্রভাত চন্দ্র রায়কে (৩৩) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। ললিতার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের ডোলোপাড়া এলাকার আমবাগানের একটি ড্রেনে খুঁড়ে পুলিশ টাবুলের মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময়
টাবুলকে হত্যায় ব্যবহৃত কুড়ালটিও জব্দ করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ললিতা জানান, টাবুলের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরকীয়ার সম্পর্ক। তবে সম্প্রতি তিনি টাবুলের সঙ্গে আর সম্পর্ক না রাখার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু টাবুল তাকে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে বাধ্য করছিলেন। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ললিতা টাবুলকে হত্যার জন্য ৩০ হাজার টাকায় সদর উপজেলার টুনিরহাট এলাকার রফিকুল ইসলাম ও ডলোপাড়া এলাকার মোন্তাজ আলীকে ভাড়া করেন। বুধবার কৌশলে ললিতা টাবুলকে মেয়েজামাইয়ের বাড়ি হাড়িভাসার জয়গুণ মার্কেটে ডেকে নেন। সেখান থেকে ললিতা ও তার মেয়েজামাই প্রভাত মোটরসাইকেলে করে টাবুলকে নিয়ে যান ডোলোপাড়ার আম বাগানে। সেখানে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে রফিকুল ও মোন্তাজ ধারাল কুড়াল দিয়ে টাবুলকে আঘাত করেন। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করে ড্রেনের মধ্যে মাটিচাপা দেন। এ ঘটনায় ললিতা ও তার জামাতা প্রভাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

অন্যদিকে বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর সাওতালপাড়া ঘাট এলাকায় নিখোঁজের ৫ দিন পর নুরল ইসলাম (৪২) নামের এক ইজিবাইক চালকের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নদীতে মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত নুরুল ওই ইউনিয়নের কাউয়াখাল এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, গত শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে বাড়ি থেকে ইজিবাইক নিয়ে বের হন নুরুল। রাতে বাড়ি না ফিরলে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরদিন দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা এলাকায় তার ইজিবাইকটি পাওয়া যায়।

রোববার (২৮ জানুয়ারি) নুরুলের স্ত্রী শেফালি বেগম বোদা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫ জনের নামে ইজিবাইক ছিনতাই এবং অপহরণের মামলা করেন শেফালি বেগম।

এরপর আলম (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। শুক্রবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে নদী থেকে নুরুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, “গ্রেপ্তার আলম তার ভায়রা জালালকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রী বেশে ঘটনার দিন নুরুলের ইজিবাইক ভাড়া করে সাওতালপাড়া ঘাটে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তাকে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যান। জালাল ও তার ছোট ভাই চিহ্নিত ছিনতাইকারী। তাদের নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা আলমকে গ্রেপ্তার করেছি। আদালতে তার রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই দুই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

Link copied!