• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বামীর লাশ দাফন করে পরীক্ষায় অংশ নিলেন নববধূ


বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২, ২০২৩, ০৮:৫০ পিএম
স্বামীর লাশ দাফন করে পরীক্ষায় অংশ নিলেন নববধূ

এসএসসি পরীক্ষার্থী মিম খাতুন (১৬)। সোমবার (১ মে) রাতে তার স্বামীর লাশ দাফন হয়েছে। শোকে মুহ্যমান পুরো পরিবার। মিম খাতুনের শোক এবং কষ্ট অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। এরপরেও মঙ্গলবার (২ মে) এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। এই অবস্থায় পরীক্ষা খুব একটা ভালো হয়নি বলে জানিয়েছেন মিম।

মিম খাতুন উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের আনারপুর গ্রামের কালাম মণ্ডলের মেয়ে। তিনি ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে মানবিক শাখা থেকে ধুনট সরকারি এনইউ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন। মঙ্গলবার বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ছিল।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল উপজেলার চালাপাড়া গ্রামের চৈতারপাড়া এলাকার মৃত নায়েব আলী মন্ডলের ছেলে গার্মেন্টসকর্মী নান্নু মিয়ার (৩০) সঙ্গে একই উপজেলার আনারপুর গ্রামের আবুল কালাম মন্ডলের মেয়ে মিম আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন ২৯ এপ্রিল নান্নু মিয়া তার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে আসেন। রোববার (৩০ এপ্রিল) আত্মীয়-স্বজনকে শ্বশুর বাড়ি রেখে তার স্ত্রীকে নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ধুনট নিয়ে যান। পরীক্ষা শেষে তার স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যান ও আত্মীয়-স্বজন দুপুরের খাওয়া শেষে বিকালে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। ওইদিন নান্নু মিয়া শ্বশুর বাড়িতেই থাকেন। সেখানে নান্নু ও তার স্ত্রীসহ রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যান। কিন্তু মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে মিম তার স্বামীকে বিছানায় খুঁজে না পেয়ে পরিবারের লোকজনকে জানায়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর নান্নু মিয়াকে তাদের ঘরের পাশের একটি গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ সোমবার সকালে গিয়ে নান্নু মিয়ার লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।

পরীক্ষা শেষে মিম খাতুন বলেন, “ওই রাতে একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু কী কারণে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছে তা সঠিকভাবে বলতে পারছি না। বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা খুব একটা ভালো হয়নি।”

এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব তফিজ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “স্বামীকে রাতে দাফন করা হয়েছে এমন একজন পরীক্ষার্থীর আজকের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।”

ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ রবিউল ইসলাম বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। মৃত্যুটা সন্দেহজনক। লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে লাশের গায়ে কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সোমবার রাতে চালাপাড়া চৈতারপাড়ায় নিজ বাড়িতে নান্নু মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় ধুনট থানায় একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে।”

Link copied!