যশোরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিষধর রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক বেড়েছে। এখন পর্যন্ত এ জেলায় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে কেউ আক্রান্ত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে এ সাপের কামড়ে ওঝার কাছে গিয়ে ঝাড়ফুঁকে সময় নষ্ট না করে দ্রুত রোগীকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে অ্যান্টিভেনম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
যশোর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক এবিএম সাইফুল ইসলাম বলেন, রাসেলস ভাইপারের দংশনের শিকার ব্যক্তির কিডনি দ্রুত অকেজো হতে শুরু করে। শরীর জ্বালাপোড়া করার পাশাপাশি দংশনের স্থানে পচন ধরে। একই সঙ্গে দংশনের শিকার ব্যক্তির রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া না হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম থাকলেও সেটা খুব একটা কাজ করে না। তাই সাপটির কবল থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
সাপে কামড়ানো রোগীকে প্রথমেই প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। সাপের কামড়ের স্থানটি যথাসম্ভব নড়াচড়া করা যাবে না। সাপে কামড়ানো স্থানটি দ্রুত পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বা সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যাতে ধুলাবালি না লাগে। হাতের কোনো অংশে সাপে কাটলে সঙ্গে সঙ্গে ঘড়ি, ব্রেসলেট, আংটি ইত্যাদি খুলে ফেলতে হবে। কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুইয়ে দিতে হবে। তবে সাপে কামড়ানো ব্যক্তিকে কখনই কাত করে শোয়ানো যাবে না। সব সময় সোজা করে শোয়াতে হবে।
আক্রান্ত ব্যক্তির বুকের নিচে কিছু একটা দিয়ে বুকটা উঁচু করে রাখতে হবে, যাতে আক্রান্ত স্থানটি হার্ট লেভেলের নিচে থাকে। বিষাক্ত সাপের কামড়ে দু’টি দাঁত বসে গিয়ে ক্ষত তৈরি হয়। বিষহীন সাপের কামড়ে অনেকগুলো দাঁতের আঁচড় পড়তে পারে। তাই কামড় দেখে বুঝতে হবে যে- এটি বিষাক্ত সাপে কামড়েছে নাকি বিষহীন সাপে কামড়েছে। তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। বিষাক্ত সাপের কামড়ে ক্ষতস্থান জ্বালাপোড়া করে।
জানা গেছে, রাসেলস ভাইপার এক দশক আগে পদ্মা অববাহিকা ধরে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সরকারিভাবে মুন্সিগঞ্জে সর্বপ্রথম রাসেলস ভাইপার ধরা পড়ে ২০১৯ সালে। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল পদ্মা তীরবর্তী লৌহজংয়ের ঘোড়দৌড় বাজার এলাকায় গৌতম কুমার সাহার বাড়িতে রাসেল ভাইপার ধরা পড়ে। বরেন্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও সাপটির রাজত্ব এখন দেশের অন্তত ২৮টি জেলায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই সাপটির ছোবলে চলতি বছরের ৫ মাসে মৃত্যুবরণ করেছে অন্তত ১০ জন। যাদের অধিকাংশই কৃষক এবং জেলে।
এ ব্যাপারে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারের হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুস সামাদ বলেন, বিষধর সাপ হিসেবে পৃথিবীতে রাসেলস ভাইপারের অবস্থান পঞ্চম হলেও হিংস্রতা এবং আক্রমণের দিক থেকে এর অবস্থান প্রথম। আক্রমণের ক্ষেত্রে এই সাপ এতটাই চটপটে যে ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে কামড়ের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বিষধর সাপের দংশনের পর দ্রুত ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের মাধ্যমে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। এই সাপ সাধারণত ধানিজমিতে, নদীর আববাহিকায় ও ঘাসের মধ্যে বিচরণ করে। বার্ষাকালে তারা শুকনো স্থানে নিজেদের আবাসস্থল গড়ে তোলে।
এ সাপের কামড়ে মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে শক, পেশি প্যারালাইসিস, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তক্ষরণ এবং কিডনি অথবা রেনাল ফেইলিওর।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক হারুন অর রশিদ জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জরুরি বিভাগে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সরবরাহ রয়েছে এবং ভর্তি রোগীর জন্য মেডিসিন ওয়ার্ডে বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যশোরের সিভিল সার্জন চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান বলেন, যশোরে এখন পর্যন্ত এই সাপের অস্তিত্ব বা কামড়ে কেউ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। জেনারেল হাসপাতালসহ ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনমের ব্যবস্থাসহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রচারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী নেওয়া হবে।