• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষকসংকটে কুড়িগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো


সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩, ০৮:৪৪ এএম
শিক্ষকসংকটে কুড়িগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো

কুড়িগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি স্কুলগুলোর দাপ্তরিক প্রশাসনিক কাজেও সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা।

দীর্ঘদিন ধরে এসব স্কুলে শিক্ষক পদে নিয়োগ কিংবা পদোন্নতি না হওয়া এবং অনেক শিক্ষক অবসরে চলে যাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম।

প্রধান শিক্ষক না থাকার ফলে যেসব শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তারাও কোনো বাড়তি সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে নেই সরকারি নির্দেশনাও। ফলে হতাশার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন অনেকেই।

তাদের ক্লাস নিতেও তেমন একটা দেখা যায় না। দাপ্তরিক কাজেই সময় অতিবাহিত করতে হয়। আবার যেসব স্কুলে সহকারী শিক্ষক নেই সেইসব স্কুলে বাড়তি ক্লাস নিতে গিয়ে অনেক শিক্ষক বিষয় ভিত্তিক ক্লাসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। একজন শিক্ষক যখন ২-৩ টি ক্লাস বেশি নিতে যান। তখন তিনি ভালোভাবেই তার নির্ধারিত ক্লাস নিতে পারছেন না।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ২৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫০৬টিতে নেই প্রধান শিক্ষক। এর মধ্যে জেলার সদর উপজেলায় ৪৯টি, উলিপুরে ৮৮টি, চিলমারীতে ২৬টি, রৌমারীতে ৬০টি, চর রাজিবপুরে ২৭টি, রাজারহাটে ৪৩টি, ফুলবাড়ীতে ৭২টি, নাগেশ্বরীতে ৯২টি ও ভূরুঙ্গামারীতে ৪৯টি বিদ্যালয়ে পদ শূন্য রয়েছে।

এর মধ্যে ২৩৫টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠান এবং বাকি ২৭১টি বিদ্যালয় চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছাড়াই। এছাড়াও জেলায় ৬৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে।

কুড়িগ্রাম সদরের করিমের খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক নুরজাহান বেগম বলেন, “আমরা হতাশা নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছি। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। দ্রুত সরকারি গেজেট প্রকাশ করে আমাদের সম্মান রক্ষা করা হোক।”

সদর উপজেলার বাসুর ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খন্দকার আরজুমা বলেন, “প্রায় দেড় বছর ধরে এই স্কুলটিতে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য হয়ে আছে। এ অবস্থায় একজন সহকারী শিক্ষক দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাজ চলছে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকায় তার ক্লাস নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।”

উপজেলার মুক্তারাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২ বছর আগে মৃত্যু বরণ করলেও ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদটি শূন্য রয়েছে। এ বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্বও দেওয়া হয়নি কাউকেই। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি একজন সিনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষক সংকটের কারণে ৯ জন শিক্ষকের স্থলে ওই বিদ্যালয়ে এখন ৫ জন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকের পদ পূরণের জন্য বারবার আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।”

পৌরসভার ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “স্কুলগুলোতে সহকারী শিক্ষক সংকটের কারণে  শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নিশ্চিত করতে স্কুল গুলোতে শিক্ষক পদায়ন করা জরুরি।”

জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন কবির বলেন, “প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে নানা সংকটের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা হুমকিতে পড়েছে। আমাদের সদর উপজেলার চেয়ে আরও নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে।”

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “শিক্ষক সংকটের বিষয় দ্রুত সমাধান করার কাজটি চলমান। উচ্চ মহলে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।”

Link copied!