• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

জলবায়ু পরিবর্তন, প্রতিবন্ধিতা নিয়েই বড় হচ্ছে পিংকি


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩, ০৩:৪৮ পিএম
জলবায়ু পরিবর্তন, প্রতিবন্ধিতা নিয়েই বড় হচ্ছে পিংকি
পিংকি রানী মন্ডল। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

পিংকি রানী মন্ডলের বয়স এখন ১৮ বছর। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখলেও সমবয়সী আর দশটি মেয়ের মতো হেসে-খেলে চলতে পারেন না  তিনি। বলতে পারে না কথা। নিজে থেকে খেতেও পারেন না।  দিনভর বাড়ির বারান্দায় শুয়ে, বসে বা দোলনা চড়ে দিন কাটে তার। কিন্তু সব কিছু শুনতে পান পিংকি, বুঝতেও পারেন। এ যেন এক অদ্ভুত প্রতিবন্ধিতা।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাতক্ষীরা উপকূলে সৃষ্ট নানা সংকট মানুষের জীবনকে যে এভাবেও থমকে দিতে পারে, তা অনেকটা অকল্পনীয়।

পিংকি রানী মন্ডলের প্রতিবন্ধিতার কারণ জানালেন তার মা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুরের কামালকাটি গ্রামের প্রতিমা মন্ডল।

তিনি জানান, উপকূলীয় এলাকায় সবসময় খাওয়ার পানির সংকট লেগেই থাকে। ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হওয়ায় বৃষ্টি ও পুকুরের পানিই খেতে হয় তাদের। তাও সংগ্রহ করতে হয় কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে।

প্রতিমা মন্ডল বলেন, “পিংকি যখন সাত মাস পেটে, তখন খাওয়ার পানি আনতে গেলাম বাড়ি থেকে ২-৩ কিলোমিটার দূরের এক পুকুরে। তখন রোদ ছিল। আসার সময় হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। ওয়াপদার রাস্তায় কাদা হয়ে যায়। তখন কলস ভরে পানি নিয়ে আসার সময় পা পিছলে পড়ে যাই। ওই সময় পানিভর্তি কলস পড়ে আমার পেটের ওপর। এতেই হয়ে যায় আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। আমার পিংকি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে।”  

প্রতিমা আরও বলেন, “ও হওয়ার পর যখন বুঝতে পারি যে, ও স্বাভাবিক না, তখন থেকে প্রায় ছয়-সাত বছর ওকে সুস্থ করে তোলার জন্য অনেক চিকিৎসা করেছি। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে যাইনি। একপর্যায়ে ডাক্তাররা বলে ওকে আর ওষুধ খাওয়ায়ে লাভ নেই। ও এভাবেই বড় হবে।”

স্থানীয় প্রতিবন্ধী মানুষের কল্যাণে কাজ করে পদ্মপুকুর ইউনিয়ন প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি। সমিতির নির্বাহী পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমাগত লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নদী ভাঙনে মিষ্টি পানির আধারগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় খাবার পানির সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে স্থানীয় নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের ওপর। এতে উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবন্ধিতাও বাড়ছে।”

হাবিবুর রহমান আরও বলেন, “পদ্মপুকুর ইউনিয়ন প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির নাম সমিতি হলেও এটা মূলত একটা সংগঠন। আমাদের কোনো ফান্ড নেই বা কেউ ফান্ড দেয় না। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু কিছু উপকরণ সংগ্রহ করার চেষ্টা করি। পেলে প্রতিবন্ধীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার মানুষের জন্য রাষ্ট্রের এগিয়ে আসা উচিত। শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার পথও তৈরি করার দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।”

Link copied!