দেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের ডা. জহির উদ্দিন সরকারি গ্রন্থাগার ২৯ বছরে নানা প্রতিকূলতা ও বাধা অতিক্রম করে এক নতুন আশার আলো দেখেছে। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বইপ্রেমীদের পদচারণে জেলার এই গ্রন্থাগারে দিন দিন বাড়ছে পাঠকের সংখ্যা। প্রতিদিনই শতাধিক পাঠক তাদের চাহিদাসম্পন্ন বই সংগ্রহ করছেন।
সরেজমিনে পঞ্চগড় জেলার ডা. জহির উদ্দিন জেলা সরকারি গ্রন্থাগারে ঘুরে পাঠকের ভিড় দেখা গেছে। গ্রন্থাগারে শিশু থেকে শুরু করে প্রবীণদের জন্য রয়েছে ৩৮ হাজার বই। রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার, শেখ রাসেল কর্নার, শিশুদের টয়ব্রিক্সসহ পাঠকদের জন্য ফ্রি ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা। প্রতিদিন আসছে ১২টির অধিক জাতীয় দৈনিক এবং প্রতি মাসে আসছে ১২টির অধিক নতুন ম্যাগাজিন। একই সঙ্গে পুরোনো পত্রিকার কপিও সংগ্রহ করতে পারছেন পাঠকরা। প্রয়োজনে গ্রন্থাগারে নিবন্ধিত ১১৯ জন সদস্য বই নিয়ে নিজ বাড়িতে গিয়েও পড়তে পারছেন।
গ্রন্থাগার অফিস সূত্রে জানা যায়, ৩ হাজার ৪৬০ বর্গফুট আয়তনের দুটি পাঠকক্ষ একসময় অনেক পাঠক নিয়ে কার্যক্রম শুরু হলেও করোনার মাঝে সংখ্যা কিছুটা কমে যায়। বর্তমানে পর্যাপ্ত বই থাকায় প্রযুক্তির পাশাপাশি গ্রন্থাগারে নানা সুযোগ-সুবিধা থাকায় অনেকটাই পাঠক চাহিদা বেড়েছে। প্রতিদিনই শতাধিক পাঠক গ্রন্থাগারমুখী হচ্ছেন।

গ্রন্থাগারটিতে রয়েছে পাঠক রেফারেন্স, পরামর্শ, সাম্প্রতিক তথ্যজ্ঞান, নির্বাচিত তথ্য বিতরণ, তথ্য অনুসন্ধান, পুস্তক আদান-প্রদান, ফটোকপি, পুরাতন পত্রিকার তথ্য, বিনা মূল্যে ইন্টারনেট, শিশুদের জন্য টয় ব্রিক্স ও মাইক্রো বিট সেবা প্রদান, বিজ্ঞানের গবেষণা সেবা প্রদানসহ অনেক কিছু। অন্যদিকে সব বয়সী মানুষকে অবসর সময় বইমুখী করতে বিশেষ দিবসে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে।
গ্রন্থাগারটিতে আসা পাঠকরা বলছেন, গ্রন্থাগারটিতে বিভিন্ন শিক্ষাবিষয়ক বই রয়েছে। অন্যদিকে ফ্রি ইন্টারনেটের ব্যবস্থা থাকায় স্কুলের অনলাইন ক্লাসসহ বিভিন্ন অনলাইন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।
গ্রন্থাগারের নিয়মিত পাঠক জহির উদ্দীন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পঞ্চগড়ের সব বয়সী মানুষের কাছে ডা. জহির উদ্দিন গ্রন্থাগারটি জ্ঞানের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই গ্রন্থাগারে সব বিষয়ের বই আমরা পাচ্ছি। আমি নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে বই পড়তে ছুটে আসি এই গ্রন্থাগারে। এই স্থানটি আমার খুব প্রিয়। ভালো দিক হলো দিনে দিনে পাঠক সংখ্যা বাড়ছে। করোনার কারণে পাঠক উপস্থিতি কিছুটা কমে আসলেও বর্তমান সময়ে এখন উল্লেখযোগ্য পাঠক বই পড়তে আসেন।”

কথা হয় নতুন পাঠক ডাক্তার সালোয়ার জাহান তানিয়ার সঙ্গে। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এক মাস ধরে এই গ্রন্থাগারে আসছি। প্রথমে আমি এখানে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে আসছিলাম যে এখানে মানুষ আসে কি না, এখানে এসে পড়তে পারব কি না! এ নিয়ে আমার একটা সন্দেহ ছিল। তার যখন প্রথম দিন এলাম দেখি এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর। এখানকার যারা স্টাফ আছেন, তারা অনেক আন্তরিক। আর দেখি প্রতিদিনই ছোট থেকে শুরু করে বড়রা এখানে আসছে। এখানে বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বেশি সুন্দর লেগেছে এখানকার বঙ্গবন্ধু কর্নার। এই কর্নারে মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধসহ বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারছি।”
পঞ্চগড় সরকারি বিপি স্কুলের ছাত্র জিসান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এখানে বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি আমরা ফ্রি ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছি। আমাদের যে সকল বইয়ের অনেক প্রয়োজন হয়ে থাকে সে সব বই গ্রন্থাগারে রয়েছে। তবে আজকে আমি ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে এসেছি। আমাদের কিছু ক্লাসের অনলাইন বিষয়ে রয়েছে সেগুলো বাসায় দেখার জন্য নামিয়ে নিচ্ছি।”

হাজী সফির উদ্দিন আহমেদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পাঠক জান্নাতুন ফেরদৌসি জিমি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “জীবনের লক্ষ্য অনেক বড় হওয়া। তাই স্কুল-প্রাইভেটের ফাঁকে অবসর সময়টি অন্যখানে নষ্ট না করে আমরা এই গ্রন্থাগারে এসে পছন্দমতো বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করে থাকি। এখানে বাংলা, গ্রামার, সাহিত্যসহ বিভিন্ন বই রয়েছে। আমরা প্রতিদিনই এখানে এসে পছন্দের বই নিয়ে পড়ে থাকি।”
গ্রন্থাগারটির লাইব্রেরিয়ান হাবিবা খাতুন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এই গ্রন্থাগারটির মাধ্যমে জেলার সব বয়সী পাঠকদের পাঠসেবা দিয়ে থাকি। আমাদের এখানে বিভিন্ন ধরনের কর্নার রয়েছে। আর এই কর্নারে বিভিন্ন ধরনের বই থাকায় পাঠকরা তাদের চাহিদমতো তথ্য পেয়ে থাকেন। আমরা পাঠকের পড়ার উপযোগী করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি গ্রন্থাগারে। বই পড়ার পাশাপাশি ফ্রি ইন্টারনেট সেবাও আমরা দিয়ে থাকি। পাঠকরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাদের অবসর সময়ে আমাদের এখানে আসছেন।”
১৯৯৩ সালে পঞ্চগড় জেলার পৌরসভার ডোকরোপাড়া এলাকায় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ রোড সংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত হয় ডা. জহির উদ্দিন গ্রন্থাগারটি। বর্তমানে একজন লাইব্রেরিয়ান, সহকারী লাইব্রেরিয়ান, অফিস সহায়ক ও নৈশপ্রহরী দিয়ে চালানো হচ্ছে গ্রন্থাগারটি। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা এই গ্রন্থাগারটি শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
 
                
              
																                  
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    




































