• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,
বিচলিত গ্রামবাসী

রাতে মহিউদ্দিনের ফাঁসি, জানেন না মা


ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৩, ০৫:৫৪ পিএম
রাতে মহিউদ্দিনের ফাঁসি, জানেন না মা

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাতেই ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনের। তবে শেষ মুহূর্তেও তার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা সেতারা বেগম জানেন না ছেলের মৃত্যুদণ্ড রায়ের এই খবর।

অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার জান্দি গ্রামে।

জান্দি গ্রামে ড. মহিউদ্দিনের পৈত্রিক বাড়িতে বাস করেন তার মা। ১৭ বছর দেখা নেই ছেলের সঙ্গে। তার বৃদ্ধা মা কানে একদমই শুনতে পান না। তাই তিনি জানেনই না যে তার ছেলের ফাঁসি হচ্ছে। বাড়িতে কোনো সংবাদকর্মী বা কোনো আত্মীয়স্বজনের সমাগম দেখলেই তিনি জানতে চাইছেন আগমনের কারণ।

ভাঙ্গার জান্দি গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ মা ও ছোট ভাই আরজু মিয়া ছাড়াও বোন রিনা বেগম এবং দুই চাচাতো ভাই বসবাস করেন। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের লোকজন স্তব্ধ হয়ে আছেন।

চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া জানান, ড. মহিউদ্দিনের সঙ্গে তার স্ত্রী, ভাই আরজু মিয়া, বোন রিনা বেগম, ছিকু মিয়া ও শাহীন মিয়া মঙ্গলবার দুপুরে শেষ দেখা করে এসেছেন। বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত তারা সেখানে ছিলেন।

শেষ কথা কি হয়েছে জানতে চাইলে ছিকু মিয়া জানান, তার চাচাতো ভাই ড. মহিউদ্দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি ন্যায় বিচার পেলেন না। তার স্ত্রীকে বলেছেন, যেহেতু এ দেশে ন্যায় বিচার পেলাম না, তাই জায়গাজমি বিক্রি করে ছেলেমেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে।  

মহিউদ্দিনের ছোটভাই আরজু মিয়া বলেন, “আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমার ভাই মামলার চার নম্বর আসামি ছিলেন। মামলার প্রথম ও দ্বিতীয় আসামি খালাস পেল অথচ আমার ভাইয়ের ফাঁসি বহাল থাকল। বড় ভাইয়ের ফাঁসির খবর শুনলে মা স্ট্রোক করতে পারেন এ আশঙ্কায় তাকে কিছুই জানানো হয়নি।”

আরজু আরও বলেন, “আমার বড় ভাই নির্দোষ ছিলেন। বড় ভাই ভেবেছিলেন অন্যায় করিনি, ইনশাআল্লাহ খালাস পাবো। আমার ভাইয়ের বিচার পরকালে পাবো। কারা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে একটা চিঠি দিয়েছিল। সেই চিঠি বাড়ি নিয়ে খুলতে বলেছিল। আমরা গাড়ির মধ্যেই চিঠি খুলে দেখেছি তাতে লেখা রয়েছে বৃহস্পতিবার রাত দশটা এক মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে। আমরা লাশ অ্যাম্বুলেন্সে পাঠিয়ে দিব, আপনারা শুধু এম্বুলেন্সের ভাড়া দিয়ে দিয়েন।”

ওই গ্রামের পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধা হাসিনা বেগম বলেন, “মহিউদ্দিন মিয়াকে আমরা গ্রামে ডাকি সূর্য মিয়া। তার মতো একজন ভদ্রছেলে আমাদের গ্রামে নাই।”  

গ্রামের আরেক যুবক রনি মিয়া বলেন, “আমরা শুনেছি মহিউদ্দিন চাচা জাপান, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশুনা করে সোনার মেডেল পেয়েছেন। তার মত এমন মানুষ আমরা আর আমাদের এলাকায় পাবো না।” 

Link copied!