• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১১ সফর ১৪৪৬

আন্দোলনে নিহত স্বামী, সন্তানদের নিয়ে রহিমার ঠাঁই হলো বেড়িবাঁধে


রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৮:১৭ পিএম
আন্দোলনে নিহত স্বামী, সন্তানদের নিয়ে রহিমার ঠাঁই হলো বেড়িবাঁধে

জীবিকার তাগিদে ঢাকার গাজীপুরে রিকশা চালাতেন রংপুরের পীরগাছার ছাওলা ইউনিয়নের জুয়ান গ্রামের এনছের আলীর ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম। গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। দুই স্ত্রী মিলে চার সন্তানের জনক ছিলেন মনজুরুল। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর সেই স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হয়েছে। প্রথম স্ত্রীর পক্ষের দুই সন্তান তাদের মায়ের সঙ্গেই থাকেন। গাজীপুরের বড়বাড়ি জয়বাংলা রোডে দ্বিতীয় স্ত্রী রহিমা বেগম ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।

মঞ্জুরুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি জুয়ান গ্রামে এনে দাফন করা হয়। তবে ঘটনার পর থেকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই সন্তানের ঠাঁই হয়েছে রহিমার বৃদ্ধ পিতা ভূমিহীন আব্দুর রহমানের ঘরে। যিনি নিজেই চলতে পারেন না। থাকেন উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের সাহেব বাজারের পাশে তিস্তা নদীর বেড়িবাঁধের ঢালে।

রহিমা বেগমের অভিযোগ, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুড়বাড়ির লোকজন তাকে বাঁকা চোখে দেখছেন। কোন খোঁজ-খবর নেন না। শ্বশুর এনছের আলী ঠিকমতো তার সঙ্গে কথা বলেন না। এমনকি রাহিমার কারণে নাকি তাদের ছেলে মারা গেছে এমন অপবাদও তাকে দেওয়া হয়েছে।

রহিমা বেগম বলেন, “স্বামীকে হারিয়ে এখন আমি দিশেহারা। থাকছি বাবার বাড়িতে। দুই সন্তানের মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী। এদের নিয়ে আমি এখন কোথায় যাবো। এদের ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে আমি শঙ্কিত।”

তিনি আরও জানান শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়নের কারণে তিনি ভবিষ্যতে শহীদের স্ত্রী হিসেবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তিনি সরকারের কাছে শহীদের স্ত্রী হিসেবে মর্যাদার দাবি করেন এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবনের সুরক্ষা চান। তবে তিনি উপজেলা প্রশাসন ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান। যা দিয়ে তিনি দেনা পরিশোধ করেছেন।

রাহিমার বাবা আব্দুর রহমান বলেন, “আমি নিজে কোনো কাজ-কর্ম করতে পারি না। বেড়িবাঁধে থাকি। স্বামী হারা মেয়ে ও তার দুই সন্তানকে আমি কী করে ভরণপোষণ করবো।”

রাহিমার শ্বশুর এনছের আলী বলেন, “রাহিমা বেগম আমাদের কথামত চলছে না। এনিয়ে তার সাথে আমাদের সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছে না এটা সত্য।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক সুমন জানান, মঞ্জুরুলের স্ত্রী যদি রাজী থাকেন তাহলে তাদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে। আর ভবিষ্যতে সরকারি যে সকল সুযোগ-সুবিধা আসবে তা মঞ্জুরুলের পিতা ও স্ত্রীর মধ্যে ন্যায্যভাবে বণ্টন করা হবে।

Link copied!