জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় গোসলখানা নির্মাণের জন্য মাটি খনন করার সময় মাথার খুলিসহ মানুষের হাড়গোড় পাওয়া গেছে। হাড়গোড়গুলো প্রায় পাঁচ মাস আগে নিখোঁজ ধরঞ্জী গ্রামের তরুণ নাইম হোসেনের (২২) হতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা ধারণা করছেন।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার ধরঞ্জী বাজার এলাকার সামছুল ইসলামের বাড়ির সামনের জায়গা থেকে হাড়গোড়গুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনার পর থেকে সামছুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়া এক দম্পতি পলাতক। বাড়ির মালিক সামছুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি সামছুল ইসলাম বাড়ি মেরামতের কাজ করছিলেন। কাজ শেষে কিছু নির্মাণসামগ্রী বেঁচে যায়। তখন সামছুল ইসলাম বাড়ির সামনে গাছগাছালিতে ঢেকে থাকা স্থানে গোসলখানা নির্মাণের জন্য রাজমিস্ত্রিদের বলেন। তারা সেখানে লাগানো লাল ও পুঁইশাকের গাছ উপড়ে ফেলে কোদাল দিয়ে মাটি সড়াতেই পচা দুর্গন্ধ বের হয়। বিষয়টি তারা প্রধান মিস্ত্রিকে জানান। পরে বাড়ির মালিককে বিষয়টি অবগত করলে তিনি পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইশতিয়াক আলম, পাঁচবিবি থানার ওসি জাহিদুল হক ও সিআইডির সদস্যের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়।
এদিকে একই গ্রামের মৃত মাসুদ রানার ছেলে নাইম হোসেন নামের এক তরুণ চলতি বছরের ২২ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে ধরঞ্জী বাজারে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে বাড়ি ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে ওই মাসের ২৫ এপ্রিল নাইমের মামা ওহেদুল ইসলাম পাঁচবিবি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি করার সাড়ে চার মাস পার হলেও নাইমের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই লাশ উদ্ধারের পর স্থানীয়রা এটি নাইমের লাশ বলে ধারণা করছেন।
নির্মাণশ্রমিক রবিউল ইসলাম বলেন, “কাজ করতে করতে সিমেন্ট মসলা বেশি হয়েছিল। তখন গোসলখানার স্থান খোঁড়ার জন্য আমাকে বলা হয়। সেখানে লাউ, কুমড়া, পুঁইশাকের গাছ ছিল। এগুলো কঞ্চি দিয়ে ঘেরা ছিল। এসব তুলে ফেলে দেওয়ার পর ওই জায়গা দেবে যাচ্ছে। এরপর এক কোদাল মারার পর কাপড় বেঁধেছে এবং গন্ধ করছে। তখন আমি মূল মিস্ত্রিকে বিষয়টি অবগতি করি। উনি এসে দুই কোদাল কোপ মারার পর আরও গন্ধ বের হয়। তখন বিষয়টি বাড়িওয়ালাকে বলার পর তিনি থানায় জানান। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে।”
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, “ওই বাড়ির মালিক বাইরে থাকতেন। তিনি বাড়িতে এসে রাজমিস্ত্রি লাগিয়ে নির্মাণের কিছু কাজ করছেন। মাটি খুঁড়তে গিয়ে কাপড় ও দুর্গন্ধ পেয়ে আমাদের খবর দিলে মাটি খুঁড়ে লাশ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এটি পুরুষের লাশ। লাশের নমুনা ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হবে।”
ওসি জাহিদুল হক আরও বলেন, নিখোঁজ নাইম হোসেনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এটি তার লাশ কি না, ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে। ওই বাড়ির মালিক পুলিশি হেফাজতে আছেন। বাড়ির ভাড়াটিয়া রেজ্জাকুল ওরফে রাজ্জাক ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে পাওয়া যাচ্ছে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইশতিয়াক আলম বলেন, “ধরঞ্জী বাজার এলাকায় একটি বাড়িতে মৃতদেহ পাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে এসে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ গলিত এবং কিছু হাড় পাওয়া গেছে। আমরা এই মরদেহের নমুনা সংগ্রহ এবং আলামত জব্দ করেছি। মরদেহ শনাক্ত সাপেক্ষে আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব। সেই সঙ্গে এ ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।”