অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জেলার ৬০টি ইউনিয়নের পাঁচ লাখ মানুষ। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি ও আসবাবপত্র নিয়ে মহাসড়ক, বাঁধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
বুধবার (৯ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, বানের পানিতে ঘর-বাড়ি ডুবে যাওয়ায় গবাদিপশু ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক মানুষ।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মজিদা বেগম বলেন, “তিনদিন ধরে রান্না করতে পারছি না। ঘরের ভেতর প্রায় কোমর সমান পানি। খাটের ওপর কোনো রকমে বসবাস করছি। বাইরে থেকে শুকনো খাবার কিনে এনে খাচ্ছি। কোথাও বিশুদ্ধ পানি নেই।”
চকরিয়ার জেদ্দা বাজারের রাবেয়া বেগম বলেন, “নলকূপগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছি না। কলাগাছের ভেলায় চড়ে চলাফেরা করছি।”
কাকারা গ্রামের পানিবন্দি কৃষক আলী হোসেন জানান, বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একদিকে পাহাড়ি ঢলের পানি, অন্যদিকে বৃষ্টি। এ অবস্থায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে মহাসড়কে আশ্রয় নিতে হয়েছে। গ্রামে এখন খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট রয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও মনে করছেন, হাজার হাজার মানুষ অনাহারে আর পানি সংকটে থাকলেও কোনো কিছুই করতে পারছেন না তারা। পুরো চকরিয়া ও পেকুয়াবাসী এখন পানিবন্দি। মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত সহযোগিতা পৌঁছায়নি। তাই দ্রুত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন।
![](https://86818.cdn.cke-cs.com/QOKezuxUuZpoGw7a0M0R/images/d9e50ba23cb183e46c69992e7db57ba8f863485f18434710.jpg)
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, “বানের পানির কারণে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এখন প্রতিটি এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছানো একটু সময়সাপেক্ষ। তারপরও ট্রলার ও স্পিডবোটে করে সহায়তা পাঠানোর চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা রান্না করা খাবার সরবরাহ করছেন। প্লাবিত এলাকায় এরই মধ্যে ৫৮ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লাখ টাকা বিতরণ করেছে প্রশাসন। আর উদ্ধার তৎপরতাসহ সার্বিক সহায়তার জন্য মাঠে রয়েছে সেনা ও নৌবাহিনী।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, জেলার ৬০ ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাণহানি হয়েছে ৯ জনের। দুর্গত মানুষদের জন্য ২০৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। সেসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ায় ৪৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক, উখিয়ায় তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ও টেকনাফ মহাসড়কে আড়াই কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিবর্ষণে দুর্গতদের এরই মধ্যে ৫৮ টন চাল এবং নগদ ৭ লাখ টাকা বিতরণ হয়েছে। বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে সব বিভাগ একত্রে কাজ করছে।
আপনার মতামত লিখুন :