• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

তিন ঘণ্টার বাজারে বেচাকেনা হয় কোটি টাকার


শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২৩, ০৯:৩৪ এএম
তিন ঘণ্টার বাজারে বেচাকেনা হয় কোটি টাকার

ভোরের আলো ফোটার আগেই এলাহি কাণ্ড শুরু হয়ে যায় শেরপুরের ব্রিজ বাজারে। ওই বাজারটি জেলা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার চরপক্ষীমারি ইউপির সাতপাকিয়া গ্রামের শেরপুরের শেষ সীমানায়। আড়তদাররা বলছেন, সারা দেশ থেকেই পাইকাররা এই হাটে আসেন সবজি ও ফল কিনতে। পাইকাররা বলছেন, সবজির ভান্ডারখ্যাত শেরপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় ওই বাজারের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে বাজারটির সার্বিক উন্নয়নে সরকারি সহায়তা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

সরেজমিনে ব্রিজ বাজারে দেখা যায়, কারও দম ফেলার ফুরসত নেই। একদিকে পাইকাররা কৃষক এবং আড়তদারের সঙ্গে পণ্যের দাম নিয়ে দর কষাকষি করছেন। অন্যদিকে ট্রাক, লরি, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও পিকাপে শ্রমিকরা পণ্য লোড-আনলোড করছেন। বাজার ঘিরে গড়ে ওঠা টংদোকানগুলোতেও চা, পান, পাউরুটি, কেক, বিস্কুট ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা। প্রায় দেড় ঘণ্টা আপেক্ষার পর এ প্রতিবেদক কথা বলার সুযোগ পান বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।

ওই বাজারের জমির অন্যতম মালিক লাল মামুদ বলেন, ২০১৫ সালে তিনি নিজে এবং তার পরিবারের অন্য সদস্য আকবর আলী, শফিকুল ইসলাম, ডালিম মিয়া, খোকন মিয়া ও সাইদুল মিয়া মোট ৪৫ শতাংশ জমি ভাড়ায় পাইকারি হাট চালুর জন্য আড়তদারদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। পরে ৫৩ জন আড়তদার স্থাপনা তৈরি করে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই বাজারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বাড়তে থাকে পাইকারদের আনাগোনা। পরে আশপাশের আরও ৯৯ শতাংশ জমি ওই হাটের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। বর্তমানে সেখানে পাইকারদের বিশ্রামাগার, যানবাহন রাখার স্থান এবং আধুনিক মানের টয়লেটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঈশ্বরদীর পণ্য সরবরাহকারী জসিম উদ্দীন বলেন, তিনি ছয় বছর ধরে মৌসুম অনুযায়ী ব্রিজ বাজারের বেশ কয়েকটি আড়তে ফল সরবরাহ করেছেন। এ বছর তিনি ১৯৬ গাড়ি আম, ৭০ গাড়ি কাঁঠাল, ৮৪ গাড়ি লিচু সরবরাহ করেছেন। বর্তমানে নানা জাতের কলা দিচ্ছেন। তার মতো আরও অনেকেই ফলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য সরবরাহ করেন।

আব্দুস সাত্তার নামে এক আড়তদার বলেন, তিনি এখন চীন থেকে গাজর এবং ভারত থেকে টমেটো আমদানি করছেন। ওই সব পণ্য ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, লালমনিরহাটসহ সারা দেশে সাপ্লাই দিচ্ছেন।

মাস্তুরা ট্রেডার্সের মালিক খুস মাহমুদ বলেন, তার দোকানে প্রতিদিন ২০ বস্তা পেঁয়াজ, ১০ বস্তা আলু ও ১৫ বস্তা রসুন বিক্রি হয়। লেনদেন হয় লক্ষাধিক টাকা।

সবজির আড়তদার ইদ্রিস আলী বলেন, শেরপুরের চরাঞ্চল সবজির ভাণ্ডার। সদর উপজেলার কামারিয়া, কামারের চর, চরপক্ষীমারী, চরমোচারিয়াসহ ৬টি ইউনিয়নের হাজারো কৃষক তাদের ক্ষেতের সবজি ট্রাক ও পিকাপে করে ভোর ৫টার মধ্যে বাজারে চলে আসেন। এ ছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল থেকেও বিপুল পরিমাণ সবজি আসে।  

ইদ্রিস আলী আরও বলেন, ঠিক একইভাবে সারা দেশের পাইকাররা আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ মৌসুমভিত্তিক নানা ফল এ বাজারে নিয়ে আসেন। তারা আবার ফেরার সময় চাহিদামাফিক করলা, পেঁপে, বরবটি, ঝিঙ্গা ও বেগুনসহ ১৭-১৮ প্রকারের সবজি ট্রাক ও পিকআপে ভরে নিয়ে যান। সকাল ৮টার মধ্যে সব পাইকার পণ্যসামগ্রী কিনে নিয়ে আবার তাদের নিজ এলাকার বাজার ধরেন। এই তিন ঘণ্টার বাজারে প্রতি ঘণ্টায় কোটি টাকার সবজি আর ফল হাত বদল হয়। আর বাজারটি ঘিরে আয়ের পথ খুলে গেছে হাজার হাজার কৃষক পরিবারের।

হাজী এন্টারপ্রাইজের মালিক ও ব্রিজ বাজার কমিটির সভাপতি আবুল মিয়া বলেন, তিনি এক সময় জামালপুর শহরের সকাল বাজারে আড়তদারির ব্যবসা করতেন। পরে ব্রিজ বাজার চালু হওয়ার পর ওই বাজারটি নষ্ট হয়ে যায়। তিনি এখানে চলে আসেন। তার ব্যবসায় আবারও চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে।

আবুল মিয়া আরও বলেন, ব্রিজ বাজারের অবস্থান পাশের জামালপুর জেলাকে সংযুক্ত করেছে। দুই জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। এখান থেকে সারা দেশে পণ্যসামগ্রী সহজে আনানেয়া করা যায়। এসব কারণে বাজারটির নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই হাট হওয়াতে শেরপুরের চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে।

চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, ব্রিজ বাজারের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বাজারের উন্নয়নের জন্য শেরপুর সদর আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

Link copied!