• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,
‘পেলে খায়, না পেলে নাই

এক তরুণের নেতৃত্বে স্বাবলম্বী ৭ পরিবার


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩, ০৫:১৯ পিএম
এক তরুণের নেতৃত্বে স্বাবলম্বী ৭ পরিবার
স্বামী পরিত্যাক্তা দৃষ্টিহীন পারভীনের বাড়ির উঠানে সয়াতা সামগ্রী

‘পেলে খায়, না পেলে নাই’ ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসে এমন শিরোনাম দিয়ে হতদরিদ্রের তথ্য পেতে এবং পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানান শিক্ষিত তরুণ হাসানুল করিম। তার এমন আহ্বানে এলাকার কেউ কেউ সাড়া দেন। হতদরিদ্রের তথ্য পান। কিছু সহায়তাও মিলে তাদের জন্য।

হাসানুল করিমের ফেসবুকে দেওয়া ব্যতিক্রমী শিরোনামের ‘পেলে খায়, না পেলে নাই’ স্ট্যাটাসটি সংবাদ প্রকাশের নজরে আসে। এরপর যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় তরুণ সমাজসেবী ও সেচ্ছসেবক হাসানুল করিমের সঙ্গে।

হাসানুল করিম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “হতদরিদ্র, নিঃস্ব ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব আমাদের সবার। সরকারের পক্ষে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আবার এমন মানুষদের পাশে দাঁড়াবার সৌভাগ্যও সবার হয় না। এসব কাজে মানসিক শান্তি ও একধরনের তৃপ্তি আছে, আছে দায়িত্বও।”

তরুণ সমাজকর্মী স্বেচ্ছাসেবী হাসানুল করিম

শিক্ষিত তরুণ হাসানুল করিম খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বাসিন্দা। তার নেতৃত্বে ‘টিম খাগড়াছড়ি’ নামের সেচ্ছাসেবী তরুণদের নিয়ে গঠিত ২৩ সদস্যের একটি কমিটিও রয়েছে। ‘টিম খাগড়াছড়ি’কে হাসানুল করিমই তত্বাবধান করেন। ‘টিম খাগড়াছড়ি’র সদস্যরা যে কোনো সময় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান। বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও অগ্রগণ্য ভুমিকা পালন করেন এই টিমের সদস্যরা।

হাসানুল করিম সংবাদ প্রকাশকে আরও বলেন, “গত এপ্রিল মাস থেকে আমরা এলাকায় দরিদ্র, অসহায় ও হতদরিদ্রদের নিয়ে কিছু করার চেষ্টা করছি। আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় এলাকার ৭জন অসহায় মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছেন, তারা নিজেরা কিছু করে জীবীকা নির্বাহ করতে পারছেন।”

মূলত উপকারভোগীর বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তারপর সামাজিক মাধ্যমে সহায়তার আহ্বান জানানো হয়। এরপর কেউ কেউ এগিয়ে আসেন। খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনসহ দুএকজন বিত্তশালী এবং সংগঠনের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা সাহায্যের হাত বাড়ান।

টিম খাগড়াছড়ির উদ্যোগে অসহায় তরিকুল ইসলাম রাজিবকে ক্ষুদ্র ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

হাসানুল করিমদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় গত সাত মাসে (এপ্রিল-২০২৩) সাতজন হতদরিদ্র মানুষ তাদের জীবীকার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছেন।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের- আব্দুল জব্বার, নারিকেল বাগান এলাকার রাজিব, মুসলিম পাড়ার জাহানারা বেগম, তাহমিনা, শালবাগান এলাকার স্বামী পরিত্যাক্তা দৃষ্টিহীন নারী পারভীন আক্তার, প্রবীণ নূরুল আলম ও দীঘিনালা উপজেলার ঝালমুড়ি বিক্রেতা ইব্রাহিম এখন স্বাবলম্বী।

অসহায় পারভীনদের দিনলিপি:
দৃষ্টিহীন অসহায় পারভীনের স্বামী তাদের ছেড়ে চলে গেছে ১৪ বছর আগে। তার দুই সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলের বয়স এখন ২১ বছর। ছেলে যেদিন কাজ পায়, সেদিন উনুনে আগুন জ্বলে। কাজ না পেলে উপোস কাটাতে হয় তাদের। অসহায় পারভীনের এমন দুরাবস্থার তথ্য দেন প্রতিবেশী নার্গিস হাসান। এরপর হাসানুল করিমের নেতৃত্বে একটি তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সেই অর্থ দিয়ে অসহায় পারভীনকে ডিম পাড়ার উপযোগী ৫টি মুরগী, ৫টি হাঁস, হাঁস-মুরগীর খাবার এবং নিরোগ রাখতে হাঁস-মুরগীর ওষুধও দেওয়া হয়।

যেদিন পারভীনকে এসব সহায়তা দেওয়া হয়, সেদিনও তাদের বাসায় চুলো জ্বলেনি। একমাত্র ছেলে উপার্জনের খোঁজে বাইরে গেছে। হাসানুল করিমের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, সহায়তা পেয়ে আবেগের কান্নায় আপ্লুত হয়ে পড়েছে পারভীন।

প্রবীণ নূরুল আলমের বাড়ির উঠানে হাসানুল করিম ও তার টিম

অসহায় প্রবীণ নূরুল আলমকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে বাঁচিয়ে রেখেছেন তার স্ত্রী। একটি দুর্ঘটনায় স্ত্রীর একটি পা ভেঙে গেলে দুজনই ঘরবসা হয়ে যান। প্রবীণ এই দম্পতির অসহায়ত্বের চরম দুসঃময়ে পাশে দাঁড়ান হাসানুল করিম ও তার টিম।

হাসানুল করিমরা যাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তাদের সবার জীবনেই রয়েছে এমন নিষ্ঠুর নিয়তির গল্প। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেষ্টায় কেউ কেউ ভুলতে পারছেন জীবীকার সেই অমানিষা, স্বাবলম্বী হচ্ছেন সমাজে। অনুকরণীয় হোক হাসানুলরা। এই প্রত্যাশা সংবাদ প্রকাশের।

Link copied!