নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলাটি একটি শিল্প এলাকা। এখানে ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজারের মতো শিল্প কলকারখানা রয়েছে। কয়েক মাস ধরেই ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ এখানকার শিল্প কলকারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীদের। এতে লোকসানের মুখে রয়েছে ব্যবসায়ীরা। লোডশেডিংয়ে আবাসিক এলাকায়ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
শিল্প কারখানার মালিকরা ভিন্ন পন্থা হিসেবে তেল ব্যবহার করে জেনারেটরের মাধ্যমে কারখানা চালাতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। এভাবেও শতভাগ উৎপাদন করতে পারছে না। লোডশেডিং চলতে থাকলে শিল্প কারখানা সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে এখানকার শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।
শিল্প কলকারখানা মালিক ও আবাসিক গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার যাত্রামুড়া, বরাব, বরপা, ভুলতা, আড়িয়াবো, কর্ণগোপ, গোলাকান্দাইল, মুড়াপাড়া, কাঞ্চন, হাটাবো, সাওঘাট, কাতরারচক, ডহরগাঁও, পাড়াগাঁও, মুড়াপাড়া, বানিয়াদিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার শিল্প কলকারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, চাঁদর, প্রিন্ট কাপড়, লুঙ্গি, প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যসহ হরেক রকমের জিনিসপত্র। রয়েছে নিটিং ডাইং এন্ড ফিনিশিং কারখানাও।
একদিকে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং অপর দিকে গ্যাস-সংকট। গ্যাসের সংকটের কারণে জেনারেটর চালাতে গিয়ে ডিজেল ব্যবহার করতে হচ্ছে অনেকের। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫০ ভাগ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে আবাসিক খাতেও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না। আর অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ না থাকায় গরম ও পানি সংকটে পড়ে যাচ্ছে মানুষ।
কাতরারচক এলাকায় অবস্থিত গ্রামটেক নিট ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার আইয়ুব হোসেন বলেন, “লোডশিংয়ে কারখানা সচল রাখতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। গ্যাসের প্রেশার একদম কম। এখন সিএনজি স্টেশন থেকে বোতলে করে গ্যাস কিনে এনে পাইপে সংযোগ করে প্রেশার বাড়িয়ে জেনারেটর চালিয়ে কারখানা সচল রাখছি।”
গোলাকান্দাইল এলাকার জুনায়েত ফ্যাশন গার্মেন্টসের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, “আমার কারখানায় টি-শার্ট তৈরি হয়। শুধু বিদ্যুতের ওপর নির্ভর কারখানাটি। দিনে অন্তত ১২ থেকে ১৫ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। কারখানায় নিয়োজিত প্রায় ৩০০ শ্রমিক বিদ্যুৎ না থাকলে বসে সময় কাটায়। আগের তুলনায় এখন টি-শার্ট উৎপাদন অর্ধেকে চলে এসেছে। শ্রমিকদের পুরো বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে।”
কাঞ্চন এলাকার বিএম টেক্সটাইল লিমিটেড নামের চাঁদর উৎপাদন কারখানার ম্যানেজার সাদিকুর রহমান বলেন, “কাঞ্চনে প্রায় ৩০টির মতো চাদর তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব চাদর শীত মৌসুমে দেশ এবং দেশের বাইরে বিক্রি করা হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে চাদরের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।”
বরপা এলাকার অন্তিম অন্তিম নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানার এক দায়িত্বরত কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ শর্তে বলেন, “বর্তমানে বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে পুরো কারখানাটি গ্যাসের মাধ্যমে জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছে। এভাবে প্রতি মাসে এক কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। তারপরও প্রায় ২০ ভাগ উৎপাদন কম হচ্ছে।”
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাওঘাট জোনের জিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিদ্যুতের সমস্যাটি জাতীয় পর্যায়ে সমস্যা। এটা সবাই জানেন। আমরা গ্রিড থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাচ্ছি, সে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। কোনো কোনো সময় ৪০ ভাগ লোডশেডিং হচ্ছে। আবার কোনো কোনো সময় ৩০ ভাগ লোডশেডিং হচ্ছে।”
                
              
																                  

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    






































