মাদারীপুরে মদপানে দুই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এ ঘটনায় আরও দুইজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের বিচারক কে এম আলমগীর হোসাইন এই নির্দেশ দেন।
এর আগে রোববার (১৫ অক্টোবর) রাতে এ ঘটনায় মাদারীপুর সদর মডেল থানায় বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন নিহত পারুল আক্তারের বাবা আব্বাস ব্যাপারি। পুলিশ মামলার আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করে। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন নাটরের লালপুরের পোকগা গ্রামের মৃত মন্নান মন্ডলের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন পান্না (৪০) ও ছেলে তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে বাবু (৩৫) এবং মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বাঘুরিয়া গ্রামের ইয়াদ আলী মাতুব্বরের স্ত্রী ডালিয়া বেগম (৪৫)।
জামিন পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন নিহত সাগরিকা আহমেদের সাবেক স্বামী মজিবুর রহমান বয়াতী (৪৪) এবং তাদের ভাড়া বাসার কেয়ারটেকার হেলাল সরদার (৪৭)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১ অক্টোবর মাদারীপুর শহরের কলেজ রোড এলাকার লুৎফর রহমান মোল্লা বাসার চতুর্থ তলার একটি ফ্লাট ভাড়া নেন সাগরিকা আহমেদ নামের এক তরুণী। সাগরিকার সঙ্গে তার মা সাবিনা ইয়াসমিন ও মামা তোফাজ্জেল হোসেন থাকতেন। শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাত আড়াইটার দিকে হঠাৎ চিৎকার চেচামেচি শুনে ওই ফ্ল্যাটে ছুটে যান বাসার কেয়ারটেকার হেলাল সরদার। পরে মেঝেতে সাগরিকাকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
এসময় অসুস্থ্য অবস্থায় পারুল (২৬), সাবিনা ইয়াসমিন (৪০), পান্না আক্তার (৪০), ডালিয়া বেগম (৪২) ও বাবু মন্ডলকে (৩৬) উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পারুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাগরিকার মা, মামাসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় রোববার (১৫ অক্টোবর) রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাগরিকার সাবেক স্বামী ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান বয়াতী ও বাসার কেয়ারটেকার হেলাল সরদারকে আটক করে পুলিশ।
নিহত সাগরিকার সাবেক স্বামী মজিবুর রহমান বয়াতী বলেন, “তিন মাস আগে আমার সঙ্গে সাগরিকার বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে আমার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। ওর মারা যাওয়ার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। পুলিশকে আমি সবই বলেছি। তবুও আমাকে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে।”
এদিকে সাগরিকার বোন লামিয়া আক্তার বলেন, “আমার বোন (সাগরিকা) এভাবে মারা যেতে পারে না। ওরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মদের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাকে খাওয়ানো হতে পারে। আমি এ ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানাই।”
এ ব্যাপারে মাদারীপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সেলিম মিয়া বলেন, “দুই তরুণী মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক পাঁচজনকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত দুজনকে জামিন মঞ্জুর করে অপর তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নিহত ওই দুই তরুণীর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”