• ঢাকা
  • সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ জ্বিলকদ ১৪৪৬
হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ

সিনহাকে ‘ডাকাত’ বানাতে টাকা প্রস্তাব করেন ওসি প্রদীপ


কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১, ০৯:১৯ এএম
সিনহাকে ‘ডাকাত’ বানাতে টাকা প্রস্তাব করেন ওসি প্রদীপ

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত  মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে ডাকাত বানিয়ে হত্যার জন্য আসামি নুরুল আমিন ও আয়াজ উদ্দিনকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ওসি প্রদীপ।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মেজর সিনহা হত্যা মামলার তৃতীয় দফায় দ্বিতীয় দিনে দশম সাক্ষী হাফেজ জহিরুল ইসলাম আদালতকে এ কথা বলেন।

সাক্ষী হাফেজ জহিরুল ইসলাম বলেন, “২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে দক্ষিণ মাথাভাঙ্গা জামে মসজিদের ইমাম আমি। ঘটনার দিন রাতে উত্তর মালিশ গনিয়া ওমরুল কুরান জামে মসজিদে এশার আজান দিচ্ছিল। আমিও মাইকে এশার আজান শুরু করি। আমার আজান শেষ হয়। এ সময় উত্তর মালিশ গুনিয়া ওমরুল কুরআন জামে মসজিদে মাইকিং করা হচ্ছিল পাহাড়ে বাত্তি দেখা যায়, এলাকার মানুষ সতর্ক থাকবেন ওরা ডাকাত। আমি নিজের কানে শুনতে পাই মাইকিং করা ব্যক্তি নিজামুদ্দিন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওই মসজিদের ইমাম সাহেব মাওলানা মুক্তারকে ফোন করি। আমি নিশ্চিত হই ওই ব্যক্তি নিজামুদ্দিন। এরপর আমরা আমাদের মসজিদের এশারের ফরজ নামাজের আগের সুন্নত আদায় করি এবং আমার ইমামতিতে এশারের ফরজ নামাজ আদায় করি।”

“এরপর আমাদের মসজিদের সাবেক ইমাম মাওলানা হোসেন আহমেদ আমারে বলেন, ভাগিনা উত্তর মালিশ গুনিয়া মসজিদে ডাকাত বলে মাইকিং করে দেওয়া হয়েছে। তুমিও জলদি মাইকিং করে দাও। আমি উত্তরে বলি মাইকিং করতে হবে না।”

হাফেজ জহিরুল ইসলাম আদালতকে আরও বলেন, “ওনারা সেনাবাহিনীর লোক আমি নিজে পাহাড়ে যেতে দেখেছি। ওই সময় আমি সেনাবাহিনীর পোশাকের মতো পরিহিত লোকটার বর্ণনা দিই। ওনার সঙ্গে আরেকজন আছে এটাও বলি। নামাজ শেষে চায়ের দোকানে গেলে আমার মামা মোহাম্মদ আলী বলেন, ভাগিনা উত্তর মালিশ গুনিয়া মসজিদে ডাকাত বলে মাইকিং করে দেওয়া হয়েছে, তুমিও মাইকিং করে দাও। আমি বলি যে এরা সেনাবাহিনীর লোক মাইকিং করার দরকার নেই। এরপর আমি ডিসি রোড দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হই। আমি মুইন্না পাহাড়ের কাছাকাছি গেলে দেখতে পাই দক্ষিণ দিক থেকে নুরুল আমিন ও আয়াজ আসছে। তারা আমাকে বলছে যে, আমরা মাইকিং করে দিয়েছি তুমি কেন মাইকিং করো নাই। আমি বলি মাইকিং করার কোনো প্রয়োজন নাই, এরা সেনাবাহিনীর লোক। ওরা বলে, এরা সেনাবাহিনীর লোক নয়, এরা ডাকাত। এরপর তারা আমার হাত থেকে টর্চলাইট নিয়ে মুইন্না পাহাড়ের দিকে টর্চ মারতে মারতে যায়।”

“আমি বলি পাহাড়ের দিকে বাত্তি মারিও না, ওরা সেনাবাহিনীর লোক। তারা আমাকে বলে এত রাত্রে কিসের সেনাবাহিনীর লোক। এরা আব্দুল হাকিম ডাকাত, সেনাবাহিনীর ড্রেস পড়ে ডাকাতি করতে এসেছে। তারা আমাকে বলে যে শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির লোক ছিটখালি পর্যন্ত এসেছে। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ মুইন্না পাহাড়ে আসার জন্য বের হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “নুরুল আমিন আমাকে বলেছে যে ওসি প্রদীপ স্যার তাদেরকে ৫ লাখ টাকা দিবে ডাকাত মেরে ফেলার জন্য। ৫ লাখ থেকে দুই লাখ টাকা তোরে দিমু আর দেড় লাখ করি আমরা নিমু। আমি যেন ডাকাত বলে মাইকিং করে দিই। উত্তরে তাদেরকে আমি বলি দুই লাখ টাকার আমার কোনো প্রয়োজন নেই আমি মাইকিং করবো না।”

আদালত সাক্ষীর জবানবন্দি নেন। এ সময় আসামিদের মধ্যে কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।

আরও ছিলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম বলেন, “আদালতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী দিয়েছেন ডা, রনধীর দেবনাথ ও ইমাম জহিরুল ইসলাম। মেজর সিনহাকে হত্যার জন্য ভিন্ন পরিকল্পনাও ছিল আসামিদের হাতে এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় ইমাম।“

গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মামলার প্রথম দফার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সঙ্গী সাহেদুল সিফাত।

পরে গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় ৪ দিনে আরও চারজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তৃতীয় দফায় প্রথম দিনে তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মামলায় দশম সাক্ষীসহ আরও ৭৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান।

Link copied!