• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিষমুক্ত আনারস চাষে ঝুঁকছেন মধুপুরের চাষিরা


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২২, ০৮:৩৯ এএম
বিষমুক্ত আনারস চাষে ঝুঁকছেন মধুপুরের চাষিরা

চলছে আনারসের ভরা মৌসুম। বাগান থেকে শুরু করে বাজার পর্যন্ত আনারসের মিষ্টি গন্ধে সুবাস ছড়াচ্ছে। টাঙ্গাইলের মধুপুরের আনারসের স্বাদ ও সুনাম একসময় সারা দেশেই একনামে ছিল। মাঝে রাসায়নিকের অত্যধিক ব্যবহারের কারণে আনারসের বিক্রি ও সুনাম কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে কৃষকরা আবার বিষমুক্ত আনারস চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ফিরে আসতে শুরু করেছে সেই হারানো ঐতিহ্য।

মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ৬ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমিতে চাষকৃত আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এতে আনুমানিক আয় ধরা হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা।

আনারসের রাজধানী হিসেবে খ্যাত মধুপুরে জমে উঠেছে রসাল ফল আনারসের বাজার। এবার আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা, মুখে ফুটেছে হাসিও। তবে বর্তমানে আনারসের দাম কিছুটা কমেছে। চাষি, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে কাজকর্ম। গড় এলাকার জলছত্র, মোটের বাজার, গারোবাজার, সাগরদিঘি ও আশ্রাবাজারে জমে উঠেছে আনারসের কেনাবেচা।

সকাল থেকেই সাইকেল, ভ্যান, রিকশা, অটোবাইক ও ঘোড়ার গাড়িতে করে বাজারে আনারস নিয়ে আসেন কৃষকরা। সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয় আনারস ভর্তি যানগুলো। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা কৃষকদের সঙ্গে দর কষাকষি করে আনারস ক্রয় করেন। আনারস ট্রাক ভর্তি করে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। আনারস উৎপাদন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা মজুরি ভালোই পাচ্ছেন।

মধুপুরের আনারসের স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ করতে গিয়ে বেশি লাভের আশায় চাষিরা আনারসের আকার, রং উজ্জ্বল ও অসময়ে বাজারে ওঠানোর জন্য নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করছেন। এতে সুনাম হারাতে বসেছে মধুপুরের আনারসের। 
আনারসের সবচেয়ে বড় হাট জলছত্রে গিয়ে দেখা যায়, দম ফেলার সময় নেই ক্রেতা বিক্রেতা, শ্রমিকদের।

কথা হয় কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমি ২৫ বছর ধরে আনারসের চাষ করি। আমার বাবাও আনারসের চাষ করতেন। কিছুদিন আগে বাগান থেকে যে ফল ৪০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন সেটা ২২ টাকা। এবার ফলন ভালো হয়েছে। নষ্টও কম হয়েছে।”

শোলাকুড়ি গ্রামের আলী হোসেন বলেন, “প্রচণ্ড গরমে আনারসের চাহিদা বেশি থাকায় দাম মোটামুটি ভালো। প্রতি আনারসে ৫-৬ টাকা লাভ হয়।”

লোকমান তালুকদার বলেন, “আমরা খরচা অনুযায়ী লাভ পাই না। পাইকারগোই বেশি লাভ হয়।”

দিনাজপুর থেকে আসা পাইকার সাজ্জাদ মিয়া বলেন, “আনারস ভেদে ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ থেকে ৪৫ পর্যন্ত কিনি। তারপর আড়তে দিই। সেখান থেকে নিয়ে আবার খুচরা বিক্রেতারা লোকজনদের কাছে বিক্রি করে। প্রতি আনারসে ৫-৭ টাকা লাভ থাকে। বেশি লাভ করেন খুচরা দোকনদাররা। তারা ৮০, ৯০, ১০০, ১১০ টাকা পর্যন্ত প্রতি আনারস বিক্রি করেন।”

মধুপুর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ঢাকা, কুষ্টিয়া, বগুড়া, সিলেট, নাটোর, রাজশাহী, খুলনা, হবিগঞ্জ, নীলফামারী, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও দিনাজপুরসহ সারা দেশেই আনারস যায়।

জলছত্র কাঁচামাল ও সংরক্ষণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ জানান, কৃষকদের চেয়ে আগত পাইকরা এবং খুচরা ব্যবসায়ীরাই বেশি লাভবান হন।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, চলতি বছর উপজেলায় আনারসের চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি চাষাবাদ হয়েছে। উপজেলা ছাড়াও গড় এলাকার ঘাটাইল, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ও মুক্তাগাছা এবং জামালপুর সদরে আনারস চাষ হয়েছে। এখানে হানিকুইন, জায়ান্ট কিউ এবং ফিলিপাইনের এমডিটু জাতের আনারস চাষ হয়ে থাকে। বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার থেকে কৃষকরা সরে আসছেন। মধুপুরের আনারস দেশের বাইরেও প্রসেসিং করে রপ্তানি হয়ে থাকে।

Link copied!