• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

বাড়ছে অবৈধ রেলক্রসিং, ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা


রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২২, ০১:১২ পিএম
বাড়ছে অবৈধ রেলক্রসিং, ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

একের পর এক বাড়ছে পশ্চিমাঞ্চলে রেলে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা। যে যেভাবে পারছেন, সেভাবেই রাস্তা নির্মাণ করা রেললাইনের রেলক্রসিং পার হচ্ছেন। এসব অবৈধ রেলক্রসিংয়ের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বাড়ছে প্রাণহানি।

রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ নিয়ে গঠিত পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ১ হাজার ৫৬৮ কিলোমিটার। এ অঞ্চলের মোট গেটের সংখ্যা ১ হাজার ৫৮২টি (প্রকল্পসহ)। যার মধ্যে বৈধ গেট ১ হাজার ২৫৬টি। এছাড়া প্রকল্প গেট আছে ৩২৬টি। অবৈধ গেটের সংখ্যা ৫৫০টি।

এসব গেটের মধ্যে বৈধ ১ হাজার ২৫৬টির মধ্যে মাত্র ৪৩৮টিতে গেটম্যান রয়েছে। বাকি ৮১৮টিতে গেটম্যান নেই। আর অবৈধ ৫৫০টি গেটও অরক্ষিত। হিসাব মতে দেখা যায় ১ হাজার ৩৬৮টি গেটে কোনো গেটম্যান নেই।

রেলওয়ে বিভাগের গেট ছাড়াও অন্যসব বিভাগেরও রেলক্রসিং আছে। অন্য সব বিভাগের মধ্যে অবৈধ গেটের মধ্যে এলজিইডির বৈধ গেটের সংখ্যা ৭৪৬টি। অবৈধ গেটের সংখ্যা ১৭৫টি। সড়ক ও জনপদের বৈধ গেট ১২২টি। অবৈধ গেটের সংখ্যা ৭টি। সিটি করপোরেশনের অধীনে বৈধ গেটের সংখ্যা ৩৩টি। অবৈধ গেটের সংখ্যা ৩২টি। উপজেলা পরিষদে বৈধ গেটের সংখ্যা ১৩টি। অবৈধ গেটের সংখ্যা ২টি। পৌরসভা মধ্যে বৈধ গেটের সংখ্যা ১০১টি। অবৈধ গেটের সংখ্যা ৫৯টি। ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বৈধ গেটের সংখ্যা ১৬১টি। অবৈধ গেটের সংখ্যা ২০৪টি। অন্যান্য বৈধ গেটের সংখ্যা ৮০টি। অবৈধ গেটের সংখ্যা ৬১টি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, অন্যান্য বিভাগগুলো তাদের প্রয়োজনে রেলক্রসিং তৈরি করে। নির্মাণ করার সময় রেলওয়েকে অবহিতও করা হয় না। এতে করে রেলকে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়।

রেলওয়ে সূত্র জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ১৯৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওসব দুর্ঘটনায় ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে রেলগেটে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণহানির সিংহভাগই ঘটেছে লেভেলক্রসিং পার হওয়ার সময়। 
রেলগেটগুলোর বেশকিছু জায়গা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও নিরাপত্তারক্ষী নেই আবার, কোথাও গেটই নেই।

রেলওয়ে সূত্র থেকে আরও জানা যায়, রেল লাইনের ওপর দিয়ে যদি কেউ গেট নিতে চায় তাহলে ১০ বছরের অর্থ জমা দিয়ে তারা গেটটা নেবে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, রেলওয়ে কিছুই জানতে পারে না। গেট নির্মাণের পরে রেলওয়ে জানতে পারে। এতে রেলওয়েকেই কিছুটা বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

আবার কোথায় দেখা যায়, রেলওয়েকে কিছু না জানিয়ে নিজেদের চলাচলের সুবিধার জন্য যেখান সেখান দিয়ে অবৈধ রাস্তার নির্মাণ করা হচ্ছে। পরে সেগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এই সব রেলক্রসিং দিয়েই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

পশ্চিম রেলের যে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ভয়াবহ হচ্ছে, চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে অরক্ষিত একটি রেলক্রসিংয়ে ভটভটি অতিক্রম করার সময় ট্রেনের ধাক্কায় তিনজন মাছ ব্যবসায়ী নিহত হন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে অদূরেই এ ঘটনা ঘটে। এর আগে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর নীলফামারী সদরের বউবাজার রেলস্টেশন এলাকায় ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে একই পরিবারের তিন শিশু চারজন নিহত হয়েছেন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, “প্রতিনিয়ত নিজেদের প্রয়োজনের ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে জনপ্রতনিধি কিংবা অন্যরা লেভেলক্রসিং গেট সৃষ্টি করছে, যা অবৈধ। প্রতিনিয়ত এভাবে অবৈধ গেট সৃষ্ট হলে রাতারাতি সেখানে জনবল দেওয়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সম্ভব না। অবৈধ লেভেলক্রসিং যাতে তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।”

Link copied!