বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে।
রোববার (২২ আগস্ট) রাত ৯টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বানে সিটি মেয়রের উপস্থিতিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আকতারুজ্জামান, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন এবং র্যাব-৮ এর অধিনায়ক ডিআইজি জামিল হাসান।
এছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, মহানগর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এবং প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বৈঠকে ছিলেন।
মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, "বৈঠকে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। আমি আশা করছি উদ্ভুত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। আলোচনায় উভয়পক্ষের মামলা প্রত্যাহারের বিষয়েও সমঝোতা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আগামীতে যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কথাও উঠে এসেছে।"
স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল তাদেরকে চায়ের দাওয়াত দেন। সেখানেই সমঝোতা বৈঠকটি হয়।
গত বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন উচ্ছেদ করতে অভিযান চালান বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাদের অভিযান বন্ধ করে সকালে অভিযানে চালাতে বলেন। কিন্তু সেটি না মেনে ইউএনওর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন সিটি কপোরেশন কর্মী এবং আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে তারা ইউএনওর বাসভবনে হামলা চালান।
এ সময় ইউএনওর নিরাপত্তায় আনসার সদস্যরা গুলি চালালে বেশ কয়েকজন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে পুলিশের সঙ্গেও হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে বাসভবনে হামলার অভিযোগে সিটি করপোরেশনের কর্মচারী, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আসামি করে ইউএনও ও পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়।
একই ঘটনায় সিটি করপোরেশন ও আওয়ামী লীগের নেতারাও থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু থানা থেকে তাদের মামলা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়।
এর আগে ঘটনাটিকে ভুল বোঝাবুঝি বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। রোববার (২২ আগস্ট) সচিবালয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, "ঘটনাটি এখন বেশি মাত্রায় নেই, এটি সমাধানের দিকে চলে যাচ্ছে বলে আমি বিশ্বাস করি।"
এদিকে রোববার ইউএনও মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। বরিশালের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহর আদালতে মামলা দুটির আবেদন করা হয়।
এর মধ্যে একটি মামলার আবেদন করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন। অপর মামলার আবেদন করেন বিসিসির রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার। দুই মামলাতেই ইউএনও মুনিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলা দুটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।