• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ধর্ষণের আলামত নষ্ট, ওসিকে বদলি


বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২, ০২:২৫ পিএম
ধর্ষণের আলামত নষ্ট, ওসিকে বদলি

ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে বগুড়ার ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালাকে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রোববার (২৮ আগস্ট) রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে পাবনায় বদলি করা হয়।

কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। একই সঙ্গে তাকে তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে আলামত নষ্টের অভিযোগে ধর্ষণ মামলার বাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বগুড়া পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল রশিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষক মুরাদুজ্জামান ওরফে মুকুল (৪৮) গত বছরের অক্টোবরে ধুনট পৌর এলাকার দক্ষিণ অফিসারপাড়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। ওই বাসার মালিকের মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। মুরাদুজ্জামান এক দিন তাকে কৌশলে জড়িয়ে ধরে মোবাইল ফোনে ছবি তোলেন। এরপর ওই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেন।

গত ১২ মে আবারও ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী চিৎকারে করে। এ সময় স্বজনরা ছুটে এলে মুরাদুজ্জামান পালিয়ে যান। এরপর ওই ছাত্রীর কিছু আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন মুরাদুজ্জামান। পরে ওই ছাত্রীর মা তার বিরুদ্ধে গত ১২ মে ধুনট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ মুরাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার ও অপত্তিকর ভিডিও ধারণ করা মোবাইল ফোন জব্দ করেন। মুরাদুজ্জামান বর্তমানে বগুড়া কারাগারে আছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা নিজেই। ১৮ মে আসামি মুরাদুজ্জামানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তার হেফাজত থেকে আরও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করেন। ওই মোবাইল ফোনে পাওয়া কয়েকটি আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ সিডিতে কপি করে নেন ওসি। এসব সিডি ও মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ওসি আসামিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে মামলার আলামত নষ্ট করার জন্য গত ১৯ মে জব্দ করা মোবাইল ফোন দুটি আদমদীঘি থানার একজন উপপরিদর্শকের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে ফোনে থাকা সব ভিডিও ক্লিপ ও তথ্য মুছে ফেলেন। এরপর শুধু ওই দুটি মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে এক আসামি হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগের তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে তার অতীতের অপরাধচিত্র আলোচনায় উঠে আসছে।

জানা গেছে, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খবির মৃধা হত্যা মামলার আসামি ছিলেন এই কৃপা সিন্ধু বালা। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে খবির মৃধাসহ ৯ জনকে থানায় নিয়ে নির্যাতনের পর কোর্টে চালান দেওয়ার অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। দুটো মামলাই করেন নিহত খবির মৃধার বাবা নুরু মৃধা। অপরদিকে স্বর্ণের বার আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার রামপুরা থানা থেকে প্রত্যাহার হন এই ওসি।

ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, “ধুনটের অভিযোগগুলোর বিষয় নিয়ে আমরা সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা মূলত সিআইডি রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। সিআইডি রিপোর্টটা আসলেই ব্যবস্থা নেব। তবে বাদীপক্ষ থেকে একটি অভিযোগ আছে ভিডিও ডিলিট করেছে। এটা যদি হয় পর্নোগ্রাফি অ্যাক্ট অ্যাড হবে। তবে ধর্ষণ মামলায় তদন্তের ক্ষেত্রে তিনি কোনো গাফিলতি করেননি। যা যা করণীয় সবই তিনি করেছেন। ভিডিও ডিলিট করার বিষয়টি প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Link copied!