জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার জামথল থেকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি খেয়াঘাটে যমুনা নদীতে ফেরি সার্ভিস চালু হচ্ছে।
১২ আগস্ট ফেরি সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য মির্জা আজম উপস্থিত থাকবেন। ফেরি সার্ভিস চালুর খবরে উচ্ছ্বসিত যমুনা নদীর দুই পারের মানুষ।
ফেরি চালুর ব্যাপারে ২৩ জুলাই মাদারগঞ্জের জামথল ঘাট পরিবর্দশন করে মির্জা আজম।
জানা যায়, যমুনার এপারে জামালপুরের মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও কাজলাঘাট এবং ওপারে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালীতলা ও মথুরাপাড়া নৌঘাটে নৌকায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। একসময় উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল ফেরিনির্ভর।
বাহাদুরাবাদ নৌপথে ১৯৩৮ সালে বাহাদুরাবাদ রেল ফেরিঘাট চালু হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও বগুড়া জেলা থেকে যাত্রী ও মালপত্র নিয়ে পারাপার হওয়া যেত এ পথে। ঘাটে ভিড়ত বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার। ফেরির লাইনের সংখ্যা ছিল ১৩টি। ১৯৮৮ সালের বন্যায় নদীর গতি পরিবর্তনের ফলে নাব্যতা-সংকটের কারণে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখঘাট থেকে বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল অব্যাহত ছিল। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর প্রথমে যাত্রীবাহী ট্রেন ও পরে মালবাহী ওয়াগন পারাপার বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাহাদুরাবাদ-বালাসী রুটে ফেরি চলাচল বন্ধের পর বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলার মানুষ জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বদলে মাদারগঞ্জ হয়ে নৌকায় যমুনা পারাপারের পর বগুড়া হয়ে যাতায়াত শুরু করে। উত্তরবঙ্গের লোকজনও সারিয়াকান্দির কালীতলা বা মথুরাপাড়াঘাট থেকে নৌকায় নদী পারাপার হয়ে এ পারের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করছে। এ পথে চলাচলে নৌকা ভাড়া জনপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কালীতলাঘাট থেকে মাদারগঞ্জ যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ আসনের সাংসদ মির্জা আজম বলেন, ফেরি সার্ভিস চালুর প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। আপাতত যমুনার দুই পারে কোনো ফেরিঘাট নির্মিত হচ্ছে না।
মির্জা আজম আরও বলেন, যাত্রী ও ছোট গাড়ি পারাপারের মধ্য দিয়ে ফেরি সার্ভিস চালু হলেও শিগগিরই বড় যানবাহন পারাপার শুরু হবে। এ জন্য বগুড়া-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জামালপুর-মাদারগঞ্জ থেকে জামথল পর্যন্ত এলজিইডির ১২ ফুট সড়ক ২৪ ফুটে উন্নীত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ লাঘব হবে।
মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক জাহিদুর রহমান তালুকদার উজ্জ্বল বলেন, সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ পথে ফেরি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষ বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়া রাজধানী ঢাকায় বাসে কম সময়ে যাতায়াত করতে পারবে। পাশাপাশি যমুনা সেতুর ওপর চাপ কমবে। ফেরি ঢালু হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
জাহিদুর রহমান তালুকদার উজ্জ্বল আরও বলেন, যমুনায় ফেরি সার্ভিস চালুর খবরে যমুনার দুই পারের মানুষের মধ্যে খুশির বন্যা বইছে। অপর দিকে মাদারগঞ্জ-সারিয়াকান্দি নৌপথে সি-ট্রাক শহীদ আব্দুর রউফ সেরনিয়াবাদ চালু ও উদ্বোধন উপলক্ষে ২৩ জুলাই দুপুরে মাদারগঞ্জ জামথলে ফেরিঘাট পরিদর্শন করছেন সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওবায়দুর রহমান বেলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অরুন কুমার সাহা ও তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক জাহিদুর রহমান তালুকদার উজ্জলসহ স্থানীয় নেতারা।