যশোরের শার্শা উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে জামাইয়ের হাতে শ্বশুর খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) জেলার শার্শা উপজেলার লক্ষপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- মেয়ের জামাই তুহিন, তার ভাই রুহিন ও তাদের বাবা কুদ্দুস।
নিহত আবু মুছা বিশ্বাস (৪৪) শার্শার লক্ষপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মুনসুর বিশ্বাসের ছেলে। আহত ব্যক্তি হলেন- একই এলাকার আব্দুল মোমেনের ছেলে ইমরান (৩১)।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ৬ বছর আগে শার্শার দুর্গাপুর গ্রামের তুহিনের সঙ্গে বিয়ে হয় প্রতিবেশি আবু মুছার মেয়ে সোহানা খাতুনের। দুই বছরের মাথায় আরিয়ানকে (৪) নামের এক ছেলে জন্ম নেয় তাদের ঘরে। বিয়ের ক’বছর যেতে না যেতেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক অশান্তিতে সর্ম্পক্য বিচ্ছেদ হয়। পরে গ্রাম্য শালিসে ছেলে এক সপ্তাহ বাবার কাছে এক সপ্তাহ মায়ের কাছে থাকবে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ছেলেকে বাবা নিয়ে গেলে পরের সপ্তাহে মা সোহানা আনতে যায়। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির লোকজন ছেলেকে না দিলে সোহানাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। সোহানা বাড়ি ফিরে বাবাকে জানান। পরে তার বাবা মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি নাতিকে আনতে গিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জামাই ও তার স্বজনেরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে।
খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু মুছাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আবু মুছার আর এক স্বজনকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয় যশোর মেডিকেলে।
এ ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে আটক করেছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গেছে।
লক্ষনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম বলেন, “গ্রাম্য শালিসে সিদ্ধান্ত হয় ছোট বাচ্চা এক সপ্তাহ করে বাবা ও মায়ের কাছে থাকবে। কিন্তু সে কথা অমান্য করে জামাই তুহিন শ্বশুরকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ হত্যার কঠিন বিচার হওয়া উচিত।”
এদিকে স্বামীকে হারিয়ে ৫ সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন নিহতের স্ত্রী মনিরা বেগম।
নিহতের ভাই আলী হোসেন বলেন, “এটা পরিকল্পিত হত্যা। হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। যাতে আর কেউ এমন জঘন্ন অপরাধ করতে না পারে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার জাহিদুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার আগেই আবু মুছার মৃত্যু হয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত ইমরান শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় হত্যা মামালার প্রস্তুতি চলছে। খুব দ্রুত আসামিদের আটক করা হবে বলেও জানান ওসি।