• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

গর্ভের শিশুকে লাথি মেরে হত্যা করল ইউপি সদস্য


কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১, ০৬:৫৪ পিএম
গর্ভের শিশুকে লাথি মেরে হত্যা করল ইউপি সদস্য

কিশোরগঞ্জে তিন মাসের অন্তসত্ত্বা এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর বাদীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে গর্ভের বাচ্চা মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী বর্তমানে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের তদন্তের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এসপি শাহাদাৎ হোসেন।

মামলার বিবরণ বলছে, সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের বেত্রাহাটি মীরপাড়ার বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে চার মাস আগে বিয়ে হয় ওই নির্যাতিতা নারীর। বিয়ের ৩ মাস পর অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি। মাইজখাপন ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. বকুল মিয়ার কাছে ওই নারী গর্ভবতী কার্ডের জন্য গেলে তিনি পরিষদে মাটি কাটার চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২১ হাজার টাকা আদায় করেন। এর কিছুদিন পর গর্ভবতী কার্ডের জন্য আরও ১০ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি।

কয়েক দিন পর চাকরি ও কার্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য ওই নারীকে তার বাড়িতে দেখা করতে বলেন। সরল বিশ্বাসে ওই নারী ইউপি সদস্যের বাড়িতে গেলে তিনি তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।

এরপর ওই নারী ধর্ষণের বিচার চাইলে তাকে খুন করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে বলে প্রথমে হুমকি দেয়। পরে ওই নারীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন ইউপি সদস্য বকুল মিয়া। এ ঘটনাটি এলাকাবাসী ও স্বামীকে জানান। স্বামী আসামির ভয়ে তার পক্ষালম্বন করে অবস্থান নেন বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন ওই নারী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ওই নারী সাংবাদিকদের বলেন, “আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বকুল মিয়া আমাকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে পরের দিন গত ১৯ আগস্ট কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণ না করে আমাকে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করার জন্য পরামর্শ দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আমি বকুল মিয়াকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করি। মামলাটি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ বিচারক পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।”

এদিকে, মামলাটি দায়েরের পর বকুল মেম্বার মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য ওই নারীর উপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। এক পর্যায়ে ৩১ আগস্ট রাতে ওই নারীকে মারধর করার এক পর্যায়ে পেটে লাথি দিলে গুরুতর আহত হন। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করলে ওই নির্যাতিতা নারী একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করেন।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. বকুল মিয়া ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।”

কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, “ঘটনাটি জানার পর ওই নারীকে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতাল ত্যাগ না করতে বলে দিয়েছি।”

পিবিআই কিশোরগঞ্জ শাখার এসপি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “মামলাটি তদন্তের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
 

Link copied!