৯ আগস্ট, সোমবার আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯০টি দেশের ৩৭০ মিলিয়ন আদিবাসী এই দিনটি পালন করেন। আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা এ দিনটিতে তাদের নিজেদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি তাদের দাবি-দাওয়া বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন।
দিবসটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য হলো আদিবাসীদের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার, ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করে তোলা।আদিবাসী পৃথিবীর জনগোষ্ঠীর প্রায় পাঁচ ভাগ। পৃথিবীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৫ ভাগ। এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ হাজার ভাষা রয়েছে।রয়েছে প্রায় ৫ হাজার স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য। ঐতিহাসিকভাবে তারা বিভিন্ন সময়ে শোষণ, দখলদারিত্ব, নিপীড়ন এবং বঞ্চনার মধ্য দিয়ে যায়। তারপরও পরিশ্রম ও মেধাশক্তি এবং সাংস্কৃতি বৈচিত্র দিয়ে পৃথিবীকে বৈচিত্রময় করে তুলে আদিবাসীরা।
আদিবাসী জনগোষ্ঠী আজও পৃথিবীর নানা দেশের নানা সামাজিক, সাংস্কৃতি, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রান্তিকায়নের শিকার। এ বিরাট জনগোষ্ঠীর অধিকার, দেখভাল, ভাষা এবং বৈচিত্রময় সংস্কৃতির সংরক্ষণের তাগিদ থেকেই এই দিবসটির সূত্রপাত হয়। ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে '৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবস' আন্তর্জাতিকভাবে পালনের ঘোষণা হয়।
সেই সময় থেকেই জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন করে আসছে। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে প্রতিবছর কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে একটা ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। এই ঘোষণাকে সামনে রেখেই দিবসটি পালন করে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো।
বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় ৩০ লাখ ক্ষুদ্র-জাতিগোষ্ঠী এবং এদেশের প্রগতিশীল, সংবেদনশীল, এবং সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদে বিশ্বাসী মানুষ বেশ জাকজমকপূর্ণভাবে সারাদেশে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করে থাকে। এই বছর করোনা মহামারির কারণে সীমিত আকারে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোকে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পার্বত্য জেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও অন্যান্য সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপন করছে। প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে বিশিষ্টজনদের শুভেচ্ছা বার্তা প্রচার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়াও বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের স্মরণে এবং পৃথিবী থেকে মহামারি তুলে নেওয়ার প্রার্থনায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা করেন রাঙ্গামাটিবাসী।