লকডাউন উপেক্ষা করে ঢাকায় ফিরছেন হাজারো মানুষ। সোমবার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে সকালের দিকে যাত্রীদের চাপ না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেরিঘাট এলাকায় কর্মস্থলমুখী যাত্রীর ভিড় বাড়ছে। কোনো ধরনের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে নদী পার হয়ে পাটুরিয়ায় আসছেন এসব মানুষ।
সোমবার (২ আগস্ট) সরেজমিনে পাটুরিয়ার তিনটি ঘাট এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অপর দিকে লঞ্চঘাট এলাকায় যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই। অন্য দিনের মতো ভোগান্তি না পোহাতে হলেও যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। ১ আগস্ট শিল্পকারখানা খোলার খবরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ কর্মস্থল ঢাকায় ফিরছেন।
পাটুরিয়া ৩ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় কথা হয় পোশাকশ্রমিক সীমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি কুষ্টিয়া থেকে এসেছেন পাটুরিয়ায়। নবীনগরের বাইপেলে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি জানান, কুষ্টিয়া থেকে দৌলতদিয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত বাস ভাড়া ১৫০ টাকা। কিন্তু সবার কাছ থেকে ৩৫০ টাকা নিয়েছে। ঘাট পার হয়ে দেখি নবীনগরের ভাড়া চায় ৫০০ টাকা। কাল কারখানা খুলেছে কাল আসতে পারিনি তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আজ যেতে হচ্ছে।
নড়াইল সদর উপজেলার বাশগ্রামের মো. সেলিম হোসেন। মিরপুরের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। ঈদের আগের দিন পরিবারের তিন সদস্য নিয়ে অনেক ভোগান্তিতে গ্রামে গিয়েছিলেন। সরকারঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধে বাড়িতেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ছিলেন। ৩১ জুলাই অফিস থেকে কাজে ফেরার জন্য বলা হয়। কাল ফিরতে পারেননি বলে আজ সকালে নড়াইল বাসস্ট্যান্ড থেকে তার মতো সাত জন ৬ হাজার টাকা দিয়ে রিজার্ভ করে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসেন। ঘাট পার হওয়ার পর প্রাইভেট কারে জনপ্রতি ৭০০ করে লাগবে বলে জানান তিনি।
সীমা আক্তার, সেলিম হোসেনের মতো আরও অনেকের অভিযোগ, পোশাকশ্রমিকদের সরকার ও মালিকরা কখনো মানুষ মনে করে না। যদি মানুষ মনে করত তাহলে আমাদের নিয়ে এমন তামাশা করত না। এই যে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয় তারা এতে করে বিপাকে পড়ে যাই আমরা। আমাদের তো নিজস্ব কোনো গাড়ি নাই। পায়ে হেঁটে, বৃষ্টিতে ভিজে ৩-৪ গুণ টাকা দিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। এমন লকডাউনের জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমরা কি দেশের বোঝা?
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জিল্লুর রহমান বলেন, আজও মানুষ কর্মস্থলে ফিরছে। সকালে ঘাটে চাপ না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেরিঘাট এলাকায় ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ বেড়েছে। তবে যানবাহনের সংখ্যা কম। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৬টি ফেরির মধ্যে নয়টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।