আফ্রিকার আমাজন জঙ্গলে যাওয়ার সুযোগ সহজেই হয় না। তাই সেই অপেক্ষায় না থেকে ঘুরে আসুন আশপাশের অ্যামাজন থেকে। প্রকৃতিপ্রেমী হলে ঘুরে আসতে পারেন বাংলার অ্যামাজনে। অবাক হচ্ছেন? গল্প নয়, সত্যিই রয়েছে বাংলার অ্যামাজন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি বিভাগের পাঁচটি জেলার অন্যতম হচ্ছে আলিপুরদুয়ার জেলা। আলিপুরদুয়ার উত্তর পানিয়ালগুড়ি গ্রামে বক্সা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এর বুক চিরে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী সিকিয়াঝোরা। সেই নদীকেই ঘিরেই রয়েছে ঘন বন। বর্তমান সময়ে যা পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছে স্থানীয় বন দপ্তর।
প্রকৃতি-প্রমী, অরণ্যের ভক্তরা ঘুরে আসতে পারেন সেই বনে। দক্ষিণবঙ্গের এই সুন্দরবনের ভেতরের নদীতে নৌকা চালিয়ে বন্য প্রাণী দর্শন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। পুরো বন জুড়ে রয়েছে সিংহের ডাক, র্যাটল স্নেকের হাড় হিম করা ঝুমঝুমির শব্দ, ব্ল্যাক মাম্বার সম্মোহনী শক্তি, দাড়িওয়ালা বেবুন, জঙ্গল, চাঁদের পাহাড়, গুহার ভেতরের হীরে, বুনিপ।
আলিপুরদুয়ারে বক্সা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের অন্তর্গত সিকিয়াঝোরা ডুয়ার্সের সুন্দরবন। যা বাংলার অ্যামাজন নামে পরিচিত। পর্যটন মানচিত্রের এটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় স্থান।
সুন্দরবনের নদীগুলোর বেশির ভাগই চওড়া হয়। সিকিয়াঝোরা তুলনামূলক কম চওড়া। তবে শীতে সেখানে পর্যটকের ভিড় জমে। পর্যটকরা নৌকায় চড়ে সৌন্দর্য দেখতে থাকেন। সেই সঙ্গে চলে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। হর্নবিল, রেড-স্টার, ওয়াগটেইল পাখিদের ডাকও একাকার হয়ে গেছে সেখানে। গাছে গাছে তারা উড়ে বেড়ায়। নদীতে পানি খেতে আসে হাতিরা। সেই সঙ্গে জলহস্তির দর্শনও হবে। চারপাশের সবুজে চোখ জুড়াবে পর্যটকদের।
সিকিয়াঝোরা নদীতে প্রায় এক কিলোমিটার নৌকা বিহার করা যায়। তবে সিকিয়াঝোরা নদীতে নৌকা ভ্রমণ উপভোগ্য হবে ভোর কিংবা বিকেলে। প্রকৃতির স্নিগ্ধতা আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই জঙ্গলে বছরের যেকোনো সময়ই ঘুরে আসতে পারেন। তবে বছরের প্রথম বৃষ্টিতেই ঘুরে আসুন। বৃষ্টি বেশি হলে সেখানে অনেক স্থানই বন্ধ থাকে। বাংলার এই আমাজনে যেতে আলিপুরদুয়ার থেকে গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন।
বনের ভেতরে রেস্তোরাঁও ব্যবস্থা রয়েছে। এটি পরিচালনা করেন স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নারীরা। ২৪টি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নারীরা ওই রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। এর দায়িত্বে রয়েছে জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি। সেখানে স্থানীয় নারীরা পর্যটকদের জন্য় খাবারের ব্যবস্থা করেন। বাঙালি রান্নাও পাওয়া যাবে সেখানে। চিকেন, মাটনের পদ দেখলে পুলকিত হয়ে উঠবেন পর্যটকরা।
বক্সা জাতীয় উদ্যানের আয়তন প্রায় ৭৬০ বর্গকিলোমিটার। জাতীয় উদ্যানের মধ্যেই বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্র। এই জাতীয় উদ্যানে বাঘ, সিভেট ও রেড জাঙ্গল ফাউল দেখা যায়। তবে সিকিয়াঝোরায় নৌকা ভ্রমণের সময় এদের দেখা পাওয়া কঠিন। বক্সা অভয়ারণ্যে রয়েছে এশীয় হাতি, বাঘ, গৌর, বুনো শুয়োর, সম্বর হরিণ, ভালুক, সিভেট, দৈত্যাকার কাঠবিড়ালী, চিতল হরিণ, ক্লাউডেড চিতাবাঘ, বুনো মোষ সহ প্রায় ৭৩টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। পাখি রয়েছে প্রায় ২৮৪ প্রজাতির। তাদের মধ্যে অনেককেই সিকিয়াঝোরার দুই ধারের গাছে গাছে উড়ে বেড়াতে দেখতে পাবেন।
পাইথনসহ ৭৬ প্রজাতির সাপ রয়েছে বক্সা জঙ্গলে। আরও রয়েছে ৫ প্রজাতির উভচর প্রাণী। উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চসংখ্যক মাছের প্রজাতি রয়েছে এই বক্সা জাতীয় উদ্যানের নদীগুলোতে।
সিকিয়াঝোরায় বেড়াতে গিয়ে বক্সা দুর্গটিও দেখে নিলে ভালো হয়। বক্সা জাতীয় উদ্যানের মধ্যেই রয়েছে বক্সা দুর্গ। ২৬০০ বর্গফুট আয়তনের এই দুর্গে ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বন্দি করে রাখা হতো বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বন অধিদপ্তর জানায়, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এখানে একটি শিশু উদ্যান তৈরি করা হবে। এছাড়া নানা রকমের বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থাও রয়েছে।