• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ছুটে চলুন নিঝুম দ্বীপে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ০৫:২৩ পিএম
ছুটে চলুন নিঝুম দ্বীপে

বছরের শেষ। শীতের এই সময়ই ঘুরে বেড়ানোর প্রকৃত সময়। সমুদ্র, পাহাড় যেখানেই ছুটবেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হবেন। সেই সুবাদে এবার ঘুরে আসুন নিঝুম দ্বীপ থেকে। দ্বীপের সৌন্দর্য্য আপনার ভেতরের শিশুসুলভ চঞ্চলতাকে ফুটিয়ে তুলবে। দেশের ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে অন্যতম পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে এই নিঝুম দ্বীপ। 

চট্টগ্রামের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়া উপজেলার ছোট একটি দ্বীপ এটি। বঙ্গোপসাগরের বুকে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠেছে। এই চরটি হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এই দ্বীপ। চর ওসমান, বাউল্লারচর, কামলার চর, ও মৌলভির চর- এই চার চর নিয়ে গঠিত পুরো নিঝুম দ্বীপ। যার আয়তন প্রায় ১৪ হাজার ৫০ একর।

১৯৪০ সালে দ্বীপটি সাগরের মাঝখানে জেগে ওঠে। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার জাতীয় উদ্যান হিসেবে একে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে দ্বীপটি হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন থেকে আলাদা করা হয়। এরপর এটি স্বতন্ত্র একটি ইউনিয়নের মর্যাদা পায়।

দ্বীপটিতে প্রচুর চিংড়ি পাওয়া যেত। স্থানীয়রা চিংড়িকে ইছা বলেই চিনেন। তাই এই দ্বীপকে ইছামতির চরও বলা হতো। তবে ১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপটি জনশূন্য হয়ে যায়। তৎকালীন সংসদ সদস্য আমিরুল ইসলাম কালাম এই দ্বীপ পরিদর্শনে আসেন এবং এর নামকরণ করেন নিঝুম দ্বীপ।

নিঝুম দ্বীপে দেখা মেলে চিত্রা হরিণ ও শীতের অতিথি পাখির। সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গেই শিয়ালের ডাক। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য যেতে হবে নামা বাজারে। সেখান থেকে পায়ে হেটে ১০ মিনিটের মধ্যেই সৈকতে যাওয়া যাবে। 

নিঝুম দ্বীপের পাশের দ্বীপ কবিরাজের চর ও দমার চর। সেখানে পাখির দেখা মেলে। পড়ন্ত বিকেলে কবিরাজের চরের কাছে চৌধুরীর খাল দিয়ে নৌকা দিয়ে কিছু দূর পরই দেখা যাবে চিত্রা হরিণ। ট্রলার রিজার্ভ করে যেতে পারেন। ১৫ জনের জন্য ট্রলার ভাড়া নিবে এক হাজার ২০০ টাকা।

তাজা ইলিশও পাওয়া যাবে কমলার দ্বীপে। জাতীয় উদ্যান এলাকা থেকে সাগর ঘুরে আসতে পারেন। ফাইবার বোট ভাড়া করে নিতে পারেন। যেখানে ৪০ জন উঠতে পারবেন। দমার চরের দক্ষিণে রয়েছে  ভার্জিন আইল্যান্ড। সেখানে অতিথি পাখির দেখা মিলবে। তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায় ট্রলার ভাড়া মিলবে। এছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন ভোলার ঢালচর আর চর কুকরি-মুকরি থেকে।

শীত কিংবা বসন্তের সময়ই এই দ্বীপে ঘুরে আসার সেরা সময়। শুকনো মৌসুমে রাস্তাঘাট শুকনো থাকবে। ঘুরে বেড়ানো যাবে অনায়াসেই। হরিণ দেখার জন্য বনের পথে হাটা যাবে।

বর্ষাকালে গেলে অনেকে কাদা থাকবে। তবে ভোজন রসিকরা এই সময় প্রচুর মাছ পাবে। মেঘনা নদী ও সাগর অনেক উত্তাল থাকবে বর্ষাকালে। 

ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল অথবা ধানমন্ডির জিগাতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে চড়ে যেতে পারেন নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত। ভাড়া পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাট যেতে হবে সিএনজি চালিত অটোরিক্সায়। সিএনজি রিজার্ভ করতে খরচ পড়বে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়া যেতে ট্রলার, সি-ট্রাক, ও স্পিড বোট ভাড়া করুন। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১২০-১৫০, ৯০, এবং ৪০০ টাকা। প্রতিদিন সকাল ৮টায় এটি ছেড়ে যাবে। আর নলচিরা থেকে চেয়ারম্যান ঘাট ফিরতি সি ট্রাক ছাড়বে সকাল ১০টায়।

নলচিরা ঘাট থেকে স্থলপথে হাতিয়া পার হতে হবে মোটর সাইকেল। ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা ভাড়ায় পাওয়া যাবে। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে ট্রলারে চেপে জনপ্রতি ২২ টাকা ভাড়ায় পৌছানো যাবে নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাটে।

ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর থেকে উঠতে পারেন। নোয়াখালীর মাইজদিতে নামতে হে। জনপ্রতি ২৩০ থেকে ৫০৩ টাকা ভাড়া পড়বে। মাইজদি থেকে সিএনজি করে আসতে হবে চেয়ারম্যান ঘাটে। এখানে সিএনজি রিজার্ভ করতে খরচ পড়তে পারে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। 

লঞ্চ ভ্রমণ করে ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার সবচেয়ে সেরা উপায়। সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকাল সাড়ে ৫ টায় লঞ্চ হাতিয়ায় তমুরদ্দী ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। গন্তব্যে পৌঁছাতে পরদিন সকাল ৯ টা। তমুরদ্দী ঘাট থেকে ঢাকার ফিরতি লঞ্চ ছাড়ে দুপুর সাড়ে ১২ টায়। লঞ্চের ডেকে, সিঙ্গেল কেবিন ও ডাবল কেবিনে ভাড়া পড়বে যথাক্রমে ৩৫০ টাকা, এক হাজার ২০০ টাকা ও দুই ২০০ টাকা।

তমরুদ্দি ঘাট থেকে মোটরসাইকেলে মোক্তারিয়া ঘাট পৌঁছানো যাবে। এরপর একইভাবে বাকি পথ যেতে হবে।

নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ও নামার বাজার সৈকতে কাছে ভালো মানের কয়েকটি রিসোর্ট রয়েছে। জনপ্রতি এক হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকায় সেখানে থাকা যাবে। তবে শীতের মৌসুমে ক্যাম্পিং করতে পারেন। নামার বাজারের নিঝুম রিসোর্টের পাশের খালটি পেরিয়ে সৈকতের কাছে প্রায় ছয় মাইলের বিশাল খোলা মাঠটিতে করা যাবে ক্যাম্পিং। 

নামার বাজারে হোটেলগুলোতে পাওয়া যাবে সামুদ্রিক মাছ এবং চিংড়ি। যা পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। যাত্রা শুরুর আগে অবশ্যই আবহাওয়ার বিষয়ে জানতে হবে। সেখানে বিদ্যুতের জন্য় জেনারেটর ও সোলারের ওপর নির্ভরশীল। যাত্রাকালে পরিমিত কাপড়, মোবাইল চার্জার, ক্যামেরার ও মোবাইলের জন্য অতিরিক্ত ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক ও টর্চ সঙ্গে রাখতে হবে।

Link copied!