• ঢাকা
  • সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

প্রয়াণ দিবসে রিচি বেনোকে স্মরণ


হাসান শাওন
প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৩, ০৮:৫৬ এএম
প্রয়াণ দিবসে রিচি বেনোকে স্মরণ

তাকে কেউ আখ্যায়িত করেন ‘ক্রিকেট শিক্ষার্থী’ নামে। খেলাটির প্রতি নিষ্ঠার পরিচায়ক তিনি। খেলেছেন আবার অধিনায়কও ছিলেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় টেস্ট দলের। সে কীর্তির সাক্ষ্য রেকর্ড বই। মাঠের ক্যারিয়ার শেষেও খেলা ছাড়েননি। লেখক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আর ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে এই লিজেন্ড ছিলেন ক্রিকেটের প্রতি আমৃত্যু দায়বদ্ধ।

বরেণ্য এ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব রিচি বেনো সেই মানুষ। আজ তার প্রয়াণ দিবস। ২০১৫ সালের ১০ এপ্রিল ঘুমের মধ্যে অদেখা ভুবনে পাড়ি জমান রিচি বেনো। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভুগছিলেন ত্বকের ক্যানসারে।

১৯৩০ সালের ৬ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের পেনরিথে জন্ম রিচির। পরিবারটিই ছিল ক্রিকেটমণ্ডিত। বাবা লুইস বেনো আলোচিত লেগ স্পিনার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬৫ রান দিয়ে ২০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড তার। ভাই জন বেনো খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলে।    

লেগব্রেক, গুগলি আর টপ স্পিনে শৈশবে বাবার হাতে বুনিয়াদি শিক্ষা রিচির। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু হয় প্যারাম্যাটা হাইস্কুলে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে নিউ সাউথ ওয়েলসের যুব টিমে খেলার ডাক আসে। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত থাকেন ৪৭ রানে। ৩৭ রানে নেন ৩ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস মূল দলে ডাক আসে স্পেশালিস্ট ব্যাটার হিসেবে। প্রথম ম্যাচে ভালো করতে পারেননি রিচি। তিনি যে একজন কার্যকর স্পিনিং অলরাউন্ডার এটিও টিম ম্যানেজম্যান্ট বোঝেনি। প্রথম শ্রেণির বেশ কটি ম্যাচে বোলিংয়ের সুযোগই পাননি তিনি। ইনজুরিও ভোগায় তাকে। ক্যারিয়ারজুড়ে মারাত্মক সব চোট সহ্য করতে হয়েছে। গ্রিন টপের অস্ট্রেলিয়ান উইকেটে রিচি শিকার হন চোখ ও চোয়ালের ইনজুরিতে। কিন্তু দমে যাননি তিনি।

টেস্ট দলে রিচি বেনো প্রথম ডাক পান ১৯৫১-৫২ মৌসুমে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। সেখানেও ভাগ্য তার সহায় ছিল না। সাফল্যের জন্য আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হয়।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দারুণ সফল। কিন্তু জাতীয় দলে ডাক আসছিল না রিচির। না কি নির্বাচকরা তার ধাত বুঝে উঠতে পারছিলেন না? ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়া সফররত ইংল্যান্ডে বিপক্ষে আবার ডাক পান তিনি। সেখানে তেমন কিছু দেখাতে পারেননি। উত্থান পতনেই যে এ লিজেন্ডের ক্যারিয়ার গড়া!

ক্যারিয়ার শেষে রিচি বেনোর টেস্ট পরিসংখ্যান এমন—৬৩টি টেস্টে ২৪.৪৫ শতাংশ গড়ে মোট রান ২,২০১। এর মধ্যে সেঞ্চুরি আছে ৩টি। অর্ধশতক ৯টি। স্পিন জাদুতে মোট উইকেট সংখ্যা ২৪৮টি। গড় ২৭.০৩ শতাংশ। ক্যারিয়ারে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৬ বার। ১০ উইকেট নিয়েছেন ১ বার। টেস্টে সর্বোচ্চ স্কোর ১২২ রান। সেরা বোলিং সাফল্য ৭২ রানে ৭ উইকেট। ক্যাচ গ্রিপের সংখ্যা ৬৫টি।  

রিচি বেনো ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম অলরাউন্ডার যিনি একই সঙ্গে দুই হাজার রান ও ২০০ উইকেটের অধিকারী।

নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বেশি সফল রিচি বেনোর ক্যারিয়ার। ২৫৯ ম্যাচে রান সংখ্যা ১১,৭১৯। গড় ৩৬.৫০। এ ফর্মেটে উইকেট সংখ্যা ৯৪৫টি। গড় ২৪.৭৩। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ৫৬ বার। এক ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন ৯ বার। প্রথম শ্রেণির ফর্মেটে সর্বোচ্চ রান ১৮৭। সেঞ্চুরি সংখ্যা ২৩টি। অর্ধশতক ৬১টি। সেরা বোলিং সাফল্য ১৮ রানে ৭ উইকেট। ক্যাচ ধরেছেন মোট ২৫৪ টি।

অস্ট্রেলিয়া টিমে রিচি বেনো অধিনায়ক ছিলেন ২৮টি টেস্টে। এর মধ্যে জয়ের সংখ্যা ১২টি ম্যাচে। ড্র হয়েছে ১১ ম্যাচ। তার অধীনে অস্ট্রেলিয়া হেরেছে মাত্র ৪ ম্যাচ। টাই হয়েছে ১টি ম্যাচ। অধিনায়ক রিচিকে আক্রমণাত্মক আখ্যায়িত করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।

মাত্র ১২ বছর লাল বলের টেস্ট ক্রিকেটে মাঠ মাতিয়েছেন রিচি বোনো। কিন্তু তিনি বেশি আলোচিত মাঠের বাইরের দীর্ঘ কর্মময় জীবনের জন্য। ক্রিকেট বোঝার সক্ষমতা তাকে ধারাভাষ্যকার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলে। তার লিখিত ক্রিকেট নিয়ে রচিত বইয়ের সংখ্যা ১৪টি। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট ইতিহাসে তার নাম উচ্চারিত হয় স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পরই।

বিবিসি, স্কাই স্পোর্টসের মতো ক্রিকেট ব্রডকাস্টারের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন। এমন সময়ও গেছে তার কণ্ঠ ছাড়া ক্রিকেট ফ্যাকাশে মনে হতো অনেকের কাছে। ধারাভাষ্যকার হিসেবে নির্মোহ তিনি। স্বদেশি হয়েও চ্যাপেল ভাইদের বিতর্কিত আন্ডারআর্ম বোলিংকে সমালোচনা করেন তীব্রভাবে। নাক উঁচু অস্ট্রেলীয় ধাঁচের ক্রিকেট ঐতিহ্যে রিচি বোনো ছিলেন বিরলতম।

তিনি ব্যাপকমাত্রায় আছেন ক্রিকেট ইতিহাসে। জীবনকালেই বহু সম্মাননা পান। ঝুলিতে আছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বীকৃতি। আইসিসি ও অস্ট্রেলিয়ার ‘হল অব ফেম’ এ আছে তার নাম। অস্ট্রেলিয়ার মুদ্রায় আছে রিচির প্রতিকৃতি। স্টেডিয়ামে আছে তার নাম রচিত বিশেষ স্ট্যান্ড।

একদিনে ক্রিকেট আজকের স্থানে পৌঁছেনি। পেছনে তাকালে দেখা যায়, অনেক সৃষ্টিশীলের অবদানে এখনের দৃঢ় ভিত্তির ক্রিকেট। তাই শুধু প্রয়াণ দিবসে নয়, নিরন্তরই উচ্চারিত হোক ক্রীড়া লিজেন্ড রিচি বেনোর নাম। পূর্বসূরিকে সম্মান জানিয়েই যে শক্তপোক্ত হয় ভবিষ্যৎ।  

 

Link copied!