• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
কাতার বিশ্বকাপ

শতাব্দীর সেরা ফাইনালের গল্পে থাকবেন এমবাপেও


সৌরভ কুমার দাস
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২২, ০৫:৩৬ পিএম
শতাব্দীর সেরা ফাইনালের গল্পে থাকবেন এমবাপেও
ছবি: গেটি ইমেজস

পরাজিতদের কেউ মনে রাখে না, আসলেই মনে রাখে না। গেলো রাতে প্রত্যেকের মুখে মুখে লিওনেল মেসির প্রশংসা, আর্জেন্টিনার জয়ধ্বনি। বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা, তাদের নিয়ে মাতামাতি হবে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু ওই ফাইনালের মঞ্চে আরও একজন ছিলেন, ম্যাচ শেষে জয়ধ্বনিটা তার নামেও হতে পারতো। কিন্তু হয়নি। কারণ, ওই দিন শেষে তো তিনি পরাজিতদের দলে, তাকে কেনই বা মনে রাখবেন। বলছি ফরাসি ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপের কথা।

এবারের ফাইনালটাকে শতব্দির সেরা বিশ্বকাপ ফাইনাল বলছেন, অবিশ্বাস্য ফাইনাল শেষে রোমাঞ্চে ডুবে যাচ্ছেন। অথচ এই ম্যাড়ম্যাড়ে ফাইনালকে শতাব্দীর সেরা ফাইনাল বানানোর রুপকারকেই ভুলে যাচ্ছেন? না, সবাইকে বলছি না তবে এটাও ঠিক কাল রাত থেকে আপনার বা আপনাদের কয়বার এমবাপের কথা মনে পড়েছে সেটা একটু ভেবে দেখবেন।

আর্জেন্টিনা জানতো এমবাপে তাদের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন। ম্যাচের শুরু থেকেই সেটাই দেখা গেলো, এমবাপের জন্য যেন ‘ভি’ আকারের নিরাপত্তা দিচ্ছেন আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা। যেন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু এমবাপেকে স্বাধীনভাবে খেলতে দেওয়া যাবে না।

তবে তাতে মোটামুটি সফলও হয়ে যাচ্ছিলো আর্জেন্টিনা। কিন্তু এমবাপে তো গড়পড়তা ফুটবলার নন যাকে আপনি আটকে রাখতে পারবেন। আর্জেন্টিনাও পারলো না!

২-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যখন বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ কিভাবে করবেন সেই পরিকল্পনা করছেন আর্জেন্টাইনরা তখনই যেন তাদের আঁকা আল্পনায় জল ঢেলে দিলেন মাত্র ২৩ বছরের এক ফরাসি যুবক।

ম্যাচের ৮০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করার মাত্র ১ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড (ভুল পড়েননি) পরই গোলার মতো ভলিতে এই এমবাপেই ম্যাড়ম্যাড়ে ফাইনালকে বানিয়ে দিলেন ইতিহাসের শ্রেষ্ট বিশ্বকাপ ফাইনাল।

না না, এখনই থামবেন না। এমবাপের হাত থেকে এত সহজেই ছাড়া পায়নি আর্জেন্টিনা। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে আরও এক গোল করে আর্জেন্টিনাকে আরও একবার লিড এনে দেন লিওনেল মেসি। এবার আর কোনো ঝুঁকি নেই, চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাই- এটা মনে মনে হলেও  বলেননি এমন মানুষ তখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

তবে ফরাসি দলে এক তরুণ ছিলেন, যাকে ভবিষ্যতের গট ডাকা হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। একটু চিন্তা করুন ভবিষ্যতের গট। শুনে হাসি পেলেও এই ছেলে বাধ্য করছেন তাকে এগুলো বলতে।

আচ্ছা ম্যাচে ফেরা যাক আবার। মেসির গোলটা এবার টিকলো মাত্র ১০ মিনিট। এবারও পেনাল্টি থেকে ম্যাচে সমতা ফেরালেন এমবাপে। লোকে বলে আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের বিপক্ষে পেনাল্টি শট নিতে স্ট্রাইকাররা দ্বিগুন চাপে থাকে। তবে এমবাপে কিন্তু ম্যাচের মধ্যেই দুইবার মার্টিনেজের অপ্রতিরোধ্য দূর্গ পেনাল্টি থেকে ভেদ করেছেন।

ওহ হ্যাঁ, টাইব্রেকারেও মার্টিনেজ থামাতে পারেননি এমবাপেকে। এবার একটু চিন্তা করুন একটা দল তিনবার পিছিয়ে পড়েছে, তিনবারই এমবাপে তাদের আবার খেলায় ফিরিয়েছেন। টাইব্রেকারে প্রথম গোল করে শুভ সূচনা করে দিয়েছেন।

এবার চিন্তা করেন এত কিছুর পর সে পরাজিত দলে! আচ্ছা, একটা ফুটবল ম্যাচে আর কি কি করা প্রয়োজন ছিল জয়ের জন্য বা এমবাপে আর কি করতে পারতো? ফুটবল জ্ঞান মোটেও না থাকলেও উত্তর হবে, না আর কিছুই করার ছিল না।

অথচ সেই লোকটা দিন শেষে মুখ গোমড়া করে বসে থাকলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এসে স্বান্তনা দিলেন, সতীর্থরাও দিলেন তাতেও কোনো কাজ হলো না। আসলে হওয়ার কথাও না। এত কিছুর পর কেই বা পরাজিত দলে থাকতে চায়।

ট্রাজিক পারফর্মেন্স বলতে যা বোঝায় সেটার জ্বলন্ত উদাহরণ যেন এমবাপের কালকের পারফর্মেন্স। শতাব্দীর সেরা ফাইনাল শেষে এমবাপেকেও আপনার মনে রাখতে হবে। বলা ভালো, আপনি মনে রাখতে বাধ্য হবেন। 

Link copied!