• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২ জ্বিলকদ ১৪৪৫
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনাল

ভারতকে হারিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৯:৫২ পিএম
ভারতকে হারিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া
ছবি: সংগৃহীত

আহমেদাবাদ স্টেডিয়ামে শুধু দেখা মিলেছিল নীল সমুদ্রের ঢেউ। তবে এই সমুদ্রসম দর্শকদের নিস্তব্ধ করার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। দারুণ পারফরম্যান্সে মাঠে আজ (রোববার) ঠিকই দর্শকদের চুপ করিয়ে দিলেন অজি ক্রিকেটাররা। তাদের কাছে যে ফাইনালে পাত্তাই পাইনি ভারত। রোহিত শর্মাদের ৬ উইকেটে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা জিতেছে অজিরা। ভারতের দেওয়া ২৪১ রানের লক্ষ্য হেসে খেলে টপকে যায় ৪ উইকেট ও ৪২বল বাকি থাকতেই।

আহমেদাবাদে ফাইনালে টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের। তবে, তার বোলাররা ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছিল শুরুতে। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে তারা তোলেন ৮০ রান। হারান ২ উইকেট। তবে এরপরেই ম্যাচে ভারতের ব্যাটারদের লাগাম টেনে ধরে অজি বোলাররা।

ভারত তাদের প্রথম উইকেট হারান ম্যাচের ৪.২ ওভার। মাত্র ৪ রান করে আউট হন শুভমান গিল। মিচেল স্টার্কের বলে অ্যাডাম জাম্পাকে ক্যাচ দেন এই ওপেনার। গিল ফিরলেও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পাওয়ার-প্লেতে ভারতের রানসংখ্যা বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন রোহিত। কিন্তু ১০ ওভার শেষ হওয়ার আগেই ভুল শট সিলেকশনে আউট হন তিনি। ৩১ বলে ৪৭ রান করেছেন তিনি।

এরপর দ্রুত ফিরেন শ্রেয়াস আইয়ারও। ৩ বলে ৪ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি, তার উইকেট নেন অজি অধিনায়ক কামিন্স। 

এরপর লোকেশ রাহুলকে নিয়ে ধীরে ধীরে দলকে টেনে তোলেন বিরাট কোহলি। এরই মধ্যে তিনি তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। এই বিশ্বকাপে কোনো ব্যাটার ছয়শও রান করতে পারেনি, তিনি ছুটছিলেন আটশ রানের দিকে। কিন্তু এবারও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এই জুটি ভাঙেন অধিনায়ক কামিন্স।  আগের দিন তিনি বলেছিলেন, আহমেদাবাদের লাখের বেশি সমর্থককে চুপ করিয়ে দিতে চান। সেটি কোহলিকে ফিরিয়ে করে দেখান কামিন্স।  
তার শর্ট বল কাট করতে গিয়ে কোহলির ব্যাটে লেগে স্টাম্পে যায়। অবিশ্বাসের চোখ নিয়ে ক্রিজে কিছুক্ষণ ঠাঁয় দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এই বিশ্বকাপের ১১ ম্যাচে ৯৫.৬২ গড় ও ৯০.৩১ স্ট্রাইক রেটে ৭৬৫ রান করেছেন। রোহিত শর্মা ৫৯৫ রান করে আছেন দুইয়ে।  

কোহলির সঙ্গে ৬৭ রানের জুটি ভাঙার পরও রাহুল দলের হাল ধরেন। তাকে সঙ্গ দিতে আসেন রবীন্দ্র জাদেজা। ৩৬তম ওভারের পঞ্চম বলে হ্যাজলউডের খাটো লেন্থের ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২২ বলে ৯ রান। 

এরপর ভরসার নাম ছিল রাহুল ও সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু স্টার্কের দুর্দান্ত এক বলে আর টিকতে পারেননি লোকেশ রাহুল। ১০৭ বল খেলে স্রেফ একটি বাউন্ডারি হাঁকানো রাহুল করেন ৬৬ রান। তার বিদায়ের পর সব আশাই ছিল সূর্যকুমার যাদবকে ঘিরে।  

কিন্তু তাকে স্লো বল করে বিপাকে ফেলে দেয় অস্ট্রেলিয়া। আলো না ছড়িয়েই সাজঘরে ফেরত যান সূর্য। ২৮ বলে ১৮ রান করে হ্যাজেলউডের শিকার হন তিনি। এরপর শেষ উইকেট জুটিতে যোগ হয় আরও ১৪ রান। ১৮ বলে ১০ রান করে ইনিংসের শেষ বলে রান আউট হন কুলদিপ যাদব। ৯ রানে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ সিরাজ। বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার স্টার্ক ৩টি এবং হ্যাজেলউড ও কামিন্স ২টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন।

২৪১ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ১৫ রান করে অস্ট্রেলিয়া। তবে দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই ডেভিড ওয়ার্নারকে ফেরান মোহাম্মদ শামি। ৩ বল খেলে ৭ রান করেন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নারের বিদায়ের পর ক্রিজে এসে ঝড় তুলেছিলেন মিচেল মার্শ। তবে সে ঝড় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বুমরাহর পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলটি মার্শের ব্যাটে আলতো চুমু খেয়ে উইকেট কিপারের হাতে জমা পড়ে। ১৫ বলে ১টি করে চার ও ছয়ে ১৫ রান করে ফেরেন মার্শ। সপ্তম ওভারের শেষ বলে স্টিভেন স্মিথকেও ফেরান বুমরাহ। ৯ বলে ৪ রান করে ফেরেন স্মিথ। 

৪৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট নিয়ে দারুণ শুরুর বার্তা দিয়েছিল ভারত। এরপরের গল্প শুধু অজিদের। অজিদের বললে ভুল হবে, এরপরে গল্পের রচিতা ট্রাভিস হেড ও মানার্শ লাবুশেনে। ভারতীয় বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে খেলতে থাকেন দারুণ ইনিংস। লাবুশেনের থেকে বেশি ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং করে হেড। 
হেড তুলে নেন শতক। কুলদীপের বলে সিঙ্গেল নিয়ে মাত্র ৯৫ বলে সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। হেড। ৬৪ ওয়ানডেতে হেডের এটি পঞ্চম শতক। শুরুতে ৩ উইকেট হারানোর পর তার ব্যাটে ভর করেই মূলত ম্যাচের নাটাই হাতে নিয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া। তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছেন লাবুশানে। সপ্তম ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন ট্রাভিস হেড। আর রান তাড়ায় নেমে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরির দেখা পান এই বাঁহাতি ব্যাটার। ১৯৯৬ সালে অরবিন্দ ডি সিলভা সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ছিলেন রান তাড়া করতে নেমে। আর এবার হেড।

হেডকে সঙ্গ দেওয়া লাবুশেনে তুলে নেন ফিফটি। ‘অ্যাঙ্কর’ রোল প্লে করা এই ব্যাটার ৯৯ বলে দেখা পান ফিফটির। বুমরাহকে চার মেরে ফিফটি করেন লাবুশেনে। এই দুজন মিলে গড়েন ১৯২ রানের পার্টনারশিপ। খেলা শেষ হওয়ার ২ রান বাকি থাকতে ফেরেন ট্রাভিস হেড। সিরাজের বলে আউট হওয়ার আগে করেন ১৩৭ রান। ম্যাক্সওয়েল নেমে শেষ ২ রান তুলে নেন প্রথম বলেই।  লাবুশেন ৫৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। ভারতের হয়ে দুই উইকেট নিয়েছে জসপ্রীত বুমরাহ।

Link copied!