• ঢাকা
  • সোমবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘ঢাবির কার্জন হলকে বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে বানিয়েছেন বিজ্ঞানী বসু’


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৪, ০৬:৫৯ পিএম
‘ঢাবির কার্জন হলকে বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে বানিয়েছেন বিজ্ঞানী বসু’
‘বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান’ তত্ত্বের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

পদার্থবিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসা ‘বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান’ তত্ত্বের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন করা হলো ঢাকায়। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর একটি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ এবং বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল সায়েন্সেস।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পদার্থবিদরা বলেন বিংশ শতাব্দীর ওই পর্যায়ে পদার্থবিদ্যায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছিল কোয়ান্টাম থিওরির মাধ্যমে, বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান ছিল তার মধ্যে বড় সংযোজন। এর মাধ্যমে বসু বিশ্ববিজ্ঞানের মানচিত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের ঢাকা নগরীকে উজ্জ্বলভাবে চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, “১৯২৪ সালে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু তার আবিষ্কার ‘বোস-আইনস্টাইন কোয়ান্টাম স্ট্যাটিসটিক্সের’ জন্য বিজ্ঞান ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। আর তিনি এটি করেছিলেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নবীন অধ্যাপক হিসেবে কার্জন হলের একটি কামরায় বসে। বিশ্ববিজ্ঞানের মানচিত্রে ঢাকাকে উজ্জ্বলভাবে চিহ্নিত করে দিয়েছেন বিজ্ঞানী বসু।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের তরুণদের মনে এই আস্থা তৈরি করতে হবে যে, আমরাই বিশ্ব। আজ আমরা সেই আকাঙ্ক্ষার শতবর্ষ উদযাপন করছি। আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, আজ বিপ্লবের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষক সমাজ তাদের চিন্তার স্বাধীনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে আবার ফিরে পেয়েছেন। এর সঙ্গে এখন বিশ্ব-বিজ্ঞানে অবদান রাখার সক্ষমতাকেও যোগ করতে হবে। আকাঙ্ক্ষাকে উচ্চে রেখে দৈনন্দিন পঠন-পাঠন গবেষণার মাধ্যমেই সেটি অর্জিত হয়।”

বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, “তিনি শুধু কঠিন তাত্ত্বিক বিজ্ঞানী ছিলেন না, ছিলেন শহরের সংস্কৃতিবান গণ্যমান্য নাগরিক। তিনি তার এসরাজ বাজনার জন্যও কদর পেতেন। শিক্ষার সর্বস্তরে, বিশেষ করে উচ্চতর বিজ্ঞান শিক্ষায় বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য তর্ক-বিতর্ক করছেন, বাংলায় বই লিখছেন, পত্রিকা বের করছেন, নিজের পাঠদানে বাংলা ব্যবহার করছেন। শহরের সাহিত্যানুরাগী সংস্কৃতিসেবীদের কয়েকজনকে নিয়ে নিয়মিত বৈঠকি আড্ডা গড়ে তুলেছেন।”

তরুণদের আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “১৯২৪ সালে বসুর আবিষ্কারের পরিবেশ যেভাবে গড়ে উঠেছিল, আজও সেভাবেই গড়ে উঠবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যার জগতের সবাইকে আহ্বান জানাই। বিপ্লবের ফসল আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় সব সংস্কার করতে, এর উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির সব প্রয়াস নিতে প্রস্তুত রয়েছে। নিজের ওপর আস্থা থাকলে এটি আমরা পারব। সব সময় আমাদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “সম্মেলনটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেসব খ্যাতনামা বিজ্ঞানী বোস-আইনস্টাইন তত্ত্বের অগ্রগতির ওপর বিশ্বময় কাজ করছেন, তাদের কয়েকজন আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সম্মেলনে যুক্ত হয়েছেন। তাদের ধন্যবাদ জানাই।”

অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এবং কলকাতার এসএনবিএনসিবিএসের প্রাক্তন অধ্যাপক পার্থ ঘোষ বক্তব্য দেন।

Link copied!