• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
নতুন আবিষ্কার

ডিম্বাণু হবে পুরুষে, শুক্রাণু হবে নারীতে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩, ০৫:৫৫ পিএম
ডিম্বাণু হবে পুরুষে, শুক্রাণু হবে নারীতে
প্রতীকী ছবি

বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে মানব সভ্যতায় একের পর এক আসছে চমকপ্রদ আর নতুন নতুন উদ্ভাবন। এবার নতুন এক আবিষ্কার পাল্টে দিচ্ছে জন্ম কৌশল। 

এই কৌশলের নাম ‘ইন ভার্টো গ্যামেটোজেনেসিস’ পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে পুরুষের দেহেও ডিম্বাণু উৎপাদন করা সম্ভব। কেবল বিপরীত লিঙ্গের মিলনে সন্তান উৎপাদন সম্ভব সেই ধারণা ভেঙ্গে গেছে অনেক আগেই। কারণ এখন সমলিঙ্গের সম্পর্কেও সন্তান উৎপাদন সম্ভব হয়। 

বিজ্ঞানই দেখিয়েছে শুধু নারী নয় পুরুষের গর্ভেও বিশেষ প্রক্রিয়ায় সন্তান ধারণ সম্ভব। টেস্টটিউব বেবি থেকে শুরু করে সারোগেসিসহ জন্মের নানা পদ্ধতি এসেছে আমাদের সামনে। এসব নিয়ে এখনো চলছে বিজ্ঞানের অব্যাহত গবেষণা।

এই গবেষণাতে এবার সামনে এলো নতুন এই পদ্ধতি। যার নাম- ‘ইন ভার্টো গ্যামেটোজেনেসিস’। এই পদ্ধতি পুরো জন্ম কৌশলটাই উলটপালট করে দিচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরুষ এবং নারীর দেহের ভিতরেই বিশেষ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু তৈরি করা সম্ভব। এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘স্টেম সেল সাইন্স’। যা বদলে দিতে পারে মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ।

প্রতীকী ছবি

গবেষকদের দাবি, মানবদেহের কোষকে প্রশমিত করে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু তৈরি করা যায়। এর ফলে যে কেউ যে কোনো বয়সেই সন্তান ধারণ করতে পারবেন। ‘ইন ভার্টো গ্যামোটোজেনেসিস’ এর জন্য প্রয়োজন ‘প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল’। ভ্রুণের প্রাথমিক পর্যায়ে এই কোষ থাকে। স্টেম সেল তৈরিতে তাই ভ্রুণ প্রয়োজন।

এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বা  মহিলার দেহের কোষকেও বিশেষ এক উপায়ে প্রাক প্রসব দশার কোষে ফিরিয়ে নেওয়া যায়। তারপর সেই কোষ দিয়ে ডিম্বাণু বা শুক্রাণু উৎপাদন করা সম্ভব। 

এই পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো মহিলা একাই নিজস্ব শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু দিয়ে সন্তান ধারণ করতে পারবেন। একইভাবে একজন পুরুষও নিজের শুক্রাণু এবং নিজ দেহে তৈরি ডিম্বাণু দিয়ে সৃষ্টি করতে পারেন নতুন প্রাণ। এমনটাই দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। 

তবে উভয় ক্ষেত্রেই কিন্তু আলাদা সারোগেট বা গর্ভধারণকারী প্রয়োজন। শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর মিলনে এই পদ্ধতিতে যে ভ্রুণ তৈরি হবে তা ধারণ করতে হবে আলাদা কোনো গর্ভে।

জন্ম কৌশলের নতুন এই পদ্ধতি এখনো মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়নি। তবে পশুর দেহে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রাথমিকভাবে ইঁদুরের দেহে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছে বিজ্ঞানীরা। ইঁদুরের লেজ থেকে কোষ নিয়ে একই দেহে তৈরি করা হয়েছে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু।

এই পদ্ধতি মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলে কী কী বাধা আসতে পারে এবং খরচ কেমন হবে, এসব নিয়ে গবেষণা অব্যাহত আছে। 

তবে মানুষের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনেক ব্যয়বহুল বলে মনে করা হচ্ছে। সমাজের সব স্তরের মানুষ এই পদ্ধতি ব্যবহারে সক্ষম নাও হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

এই পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানে বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। আরও আছে সন্তানের দাবি নিয়ে আইনী জটিলতা। সন্তান জন্মদানে যে হরমোনগুলি প্রয়োগ করা হবে, তা সবার পক্ষে উপযোগী নাও হতে পারে।

‘ইন ভার্টো গ্যামোটোজেনেসিস’ পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দিলে এর একাধিক বাবা এবং মা থাকা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে আইনগতভাবে কার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে তা নিয়েও থাকবে ঝামেলা।

তবে এসব জটিলতা আর সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যদি ‘ইন ভার্টো গ্যামেটোজেনেসিস’ কে আপন করে নেওয়া যায়, তাহলে এক ধাক্কায় অনেক দূর এগিয়ে যাবে চিকিৎসাবিজ্ঞান।

সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন

Link copied!