• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সবচেয়ে দূষিত বায়ুর জেলা গাজীপুর


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২২, ০১:৩৩ পিএম
সবচেয়ে দূষিত বায়ুর জেলা গাজীপুর

দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৮টি জেলায় গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২ দশমিক-৫ এর পরিমাণ ছিলো প্রতি ঘনমিটারে ১২১ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে বেশি অর্থাৎ অতিরিক্ত মানের দূষিত বায়ু পরিলক্ষিত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দূষণ পাওয়া যায় গাজীপুর এলাকায়। যেখানে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২ দশমিক ৫-এর মান ছিলো প্রতি ঘনমিটারে ২৬৩ দশমিক ৫১ মাইক্রোগ্রাম। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা প্রতি ঘনমিটারে ২৫২.৯৩ মাইক্রোগ্রাম। তৃতীয় অবস্থানে নারায়ণগঞ্জ। 

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ‘দেশব্যাপী ৬৪ জেলার বায়ুমান সমীক্ষা-২০২১’ শীর্ষক  বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) আয়োজিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও ক্যাপস এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। 

ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, গত বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত অর্থাৎ, ৯০ দিনে ৮১ সদস্যের একটি গবেষক দল বায়ুমানের বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা করেন। এতে দেখা যায়, দেশের সর্বমোট ৩১৬৩টি স্থানের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২ দশমিক ৫ ছিলো প্রতি ঘনমিটারে ১০২ দশমিক ৪১ মাইক্রোগ্রাম, যা দৈনিক আদর্শ মানের (৬৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ৫৭ গুণ বেশি। সবচেয়ে দূষিত তিনটি শহরের বায়ুমান ছিল বাংলাদেশের আদর্শমানের চেয়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কারকাজ, মেগা প্রকল্প, আশেপাশের ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো এই প্রধান তিনটি শহর দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী নকি। এবং মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার (গবেষণা দলের প্রধান)।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পরিবেশ আন্দোলন নেতা শরীফ জামিল, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী, প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম এবং আইনবিদ মারুফা গুলশান আরা।

গবেষণার তথ্যানুযায়ী চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম এবং দশম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম এবং কিশোরগঞ্জ। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দূষিত শহরের মধ্যে রয়েছে মাদারীপুর, যার বায়ুমান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৪৯ দশমিক ০৮ মাইক্রোগ্রাম। মাদারীপুরের পরের অবস্থানে রয়েছে পটুয়াখালী এবং মেহেরপুর। বায়ু দূষণ কম হওয়ার কারণ হিসেবে সরেজমিনে এসব এলাকায় প্রচুর পরিমাণ গাছপালা এবং প্রাকৃতিক জলাধার লক্ষ্য করা গিয়েছে। 

এ ছাড়াও এসব এলাকায় রাস্তা সংস্কার কাজের পরিমাণ খুব একটা চোখে পড়েনি। ৭ ধরনের ভূমির ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে, সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণ ছিল মিশ্র এলাকায় যার মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১১১ দশমিক ৯০ মাইক্রোগ্রাম। পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে বাণিজ্যিক (১১১.৪ মাইক্রোগ্রাম), রাস্তার সংযুক্তি (১১০.৮ মাইক্রোগ্রাম), আবাসিক শিল্প (১০৬.৭ মাইক্রোগ্রাম) এবং সংবেদনশীল এলাকা (৯৭.৩ মাইক্রোগ্রাম)। এদিক থেকে তুলনামূলক কম দূষণ পরিলক্ষিত হয় গ্রামীণ এলাকায় যার মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৯৪ দশমিক ০২ মাইক্রোগ্রাম।

মূল প্রবন্ধে ড. আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, শুধুমাত্র ১০টি (১৫.৬২%) জেলায় বায়ুর ভালো পাওয়া যায় (প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম) এবং সেইগুলো হলো কুড়িগ্রাম (৬৩.৩৩ মাইক্রোগ্রাম), নাটোর (৬৩.১৯ মাইক্রোগ্রাম), জয়পুরহাট (৫৮.২৪ মাইক্রোগ্রাম), সিরাজগঞ্জ (৫৫.২ মাইক্রোগ্রাম), মেহেরপুর। এই এগুলোর অবস্থান নদীর পার্শ্ববর্তী। রাজশাহী ভালো মানের পরিলক্ষিত হওয়ার পেছনে রাজশাহী কর্তৃপক্ষের অনেক ভূমিকা রয়েছে।

এসময় ক্যাপসের পক্ষ থেকে বায়ুদূষণ রোধে কিছু সুপারিশমালা উপস্থাপন করা হয়। তারা জানায়, অঞ্চলভেদে বায়ু দূষণের উপযুক্ত কার্যকরী পদক্ষেপগুলো হাতে নেওয়া যেতে পারে। 

স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ 

১. শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এর সমন্বয়ে দূষিত শহর গুলোতে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানো।

২. নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে। 

৩. ধূলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে।

 ৪. অবৈধ ইটভাটা গুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে।

৫. ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেস বিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করা যেতে পারে। 

মধ্যমেয়াদী পদক্ষেপ 

৬. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সকলকে উৎসাহিত করতে হবে। 

৭. আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. দূষিত শহরগুলোর আশেপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।

৯. আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসাবে সেন্ড ব্লকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে।

১০. সিটি গভর্নেন্সের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়ন মূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ

১১. নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ যতদ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে। 

১২. পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যামস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়াও বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে। 

১৩. গণপরিবহনসহ ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।

১৪. সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য নির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

১৫. পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস এবং পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে।

Link copied!