প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে।মানবাধিকার সুরক্ষায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল।”
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘বৈষম্য ঘোচাও, সাম্য বাড়াও, মানবাধিকারের সুরক্ষা দাও’।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “মিয়ানমারে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাসহ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
মানবাধিকার কমিশনের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “মানবাধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে কমিশনকে আধুনিক করা ও কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ সব ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশন দেশে মানবাধিকার সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।”
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপনে ‘মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও মানবিক মূল্যবোধ’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন ও প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মানবাধিকার বৃত্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় কমিশনকে অভিনন্দন জানান প্রধানমনত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শিশুদের শৈশব থেকেই মানবাধিকারের চর্চার জন্য বর্তমান কমিশনের ‘মানবাধিকার কোর্স’ চালু একটি শুভ পদক্ষেপ।”
সরকারের সফলতার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে পূর্বের বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। ১৯৯৮ সালে এ-সংক্রান্ত একটি কমিশন গঠনের জন্য খসড়া আইন প্রস্তুত করেছিলাম। ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯’ প্রণয়ন করি এবং সে অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করি। সরকার ইতোমধ্যে কমিশনকে শক্তিশালী করতে কমিশনের জনবল ও বাজেট বরাদ্দ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে।”
“নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ প্রতিরোধে কমিশনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ইনকোয়ারি হচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের সুফল দেশের তৃণমূল পর্যায়ের জনগণও ভোগ করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশকে ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছে। মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে বর্তমান সরকারের ‘শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি’ মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে।”
বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃস্বার্থ সংগ্রাম ও দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের এনে দিয়েছে স্বপ্নের স্বাধীনতা। তিনি আজীবন বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছেন। মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বারবার কারাবরণ করেছেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে, যেখানে প্রত্যেকে মানবিক মর্যাদা, সাম্য ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা পাবে।”
“জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যথার্থই বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের সংগ্রাম ন্যায় ও শান্তির জন্য সার্বজনীন সংগ্রামের প্রতীকস্বরূপ। সুতরাং বাংলাদেশ শুরু থেকে বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক।’ তার সে আহ্বান আজও সমানভাবে প্রযোজ্য, এজন্য আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের যেকোনো উদ্যোগে সমর্থন ও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি।”