বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, “এছাড়া কোনো সরকার তা করেনি, বরং প্রাণহানি ঘটিয়েছে।”
শনিবার (২৬ মার্চ) চার দিনব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যদি বাংলাদেশের ইতিহাস দেখি, সেই ৭১ থেকে ৭৫ সাল এবং ৭৫ এর ১৫ আগস্টের চরম আঘাত। তারপরে অন্ধকারের যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে তার স্বাধীনতার চেতনা, জয় বাংলা স্লোগান, ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ, ছবি নিষিদ্ধ, ২১ বছর এভাবে বাংলাদেশের বিজয়ের ইতিহাস পদদলিত হয় এবং অন্য ইতিহাস জানানোর চেষ্টা করা হয়। ইতিহাস কখনো কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আর সত্যের জয় হয়। এটা কেউ কখনো বাধা দিয়ে থামিয়ে দিতে পারে না। আজ সেটাই হয়েছে।”
এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে উন্নয়নের যাত্রা যদি আপনারা হিসাব করেন ৫০ বছরের মধ্যে ২৯ বছর কিন্তু উন্নয়ন হয়নি।”
একইসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন বলে কথা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে, তখন এ দেশের মানুষের জীবনে কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া পায়। তারপর ২০০৯ সালে পুনরায় যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখন থেকে এই ১৩ বছর, ১৩ বছরে যে লক্ষ্য আমরা স্থির করেছিলাম, ২০০৮-এর নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ২০২১-এর মধ্যে বাংলাদেশ যাতে মধ্যম আয়ের দেশ হবে।”
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। সব থেকে বড় কথা, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি।”
এছাড়া শতভাগ বিদ্যুতায়নের সরকারের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর আজকে আমরা আলোকিত করেছি। বাংলাদেশ যে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে, আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে আমরা ঠিকই সে আলোর পথের যাত্রা শুরু করে সমগ্র দেশের মানুষকে, তাদের প্রতিটি ঘরকে আলোকিত করার সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।”
শেখ হাসিনা আরও বলেন, “বাংলাদেশ নিয়ে আর কোনো খেলা কেউ খেলতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কখনও কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। বাংলাদেশ যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ, তা এগিয়ে যাবে।”
আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনা, প্রকল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে যেন আর কখনও কেউ অবহেলা করতে না পারে। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। শিক্ষায়-দীক্ষায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞানে সব দিক থেকে যেন আমরা এগিয়ে থাকতে পারি।”
বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই এগিয়ে যাওয়া, এই গতি আমাদের ধরে রাখতে হবে। সেইসঙ্গে কোনো মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না।”
এদিকে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে দেয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী ভাষণের কথা উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
শেখ হাসিনা বলেন, “একটা বক্তব্যের মধ্যে তিনি জানান বাঙালির ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, শোষণের চিত্র যেমন তুলে ধরেছিলেন, পাশাপাশি আগামী দিনে মুক্তির পথ তিনি দেখিয়েছিলেন।”
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ২১ বছর ধরে দেশের প্রকৃত ইতিহাসকে আড়াল করে মনগড়া ইতিহাস প্রচার করা হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, “ইতিহাসকে কখনও কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আর সত্যের জয় হয়-ই। এটাকে কেউ কখনও বাধা দিয়ে থামিয়ে দিতে পারে না। আজকে সেটাই হয়েছে।”